ঢাকায় সিনেমার আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। এ ক্ষেত্রে রিমান্ডের অপব্যবহার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে আদালত। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জবাবও চাওয়া হয়েছে।
পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এসব কথা বলে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জেড আই খান পান্না, মো. মুজিবুর রহমান, সৈয়দা নাসরিন ও মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।
শুনানিতে আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতে বলেন, ‘আমরা এ-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় দাখিল করেছি। এখানে যেসব নির্দেশনা আছে, সেসব নির্দেশনা নিম্ন আদালতকে মেনে চলতে বলা হয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের মামলা ব্যতীত সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা মেনে চলা হয় না।’
এ সময় পরীমনির জামিন হওয়ার বিষয়টি এনে আদালত বলে, ‘এই মুহূর্তে জামিন তো হয়ে গেছে। রুলটি শুনানির জন্য অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। আর রিমান্ড বিষয়ে গাইডলাইন তো আছেই।’
আইনজীবী পান্না বলেন, ‘এ জন্যই একটি আদেশ দেন যেন গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়।’
জেল থেকে বের হয়েই সেলফি তোলেন পরীমনি। ছবি: নিউজবাংলা
এ সময় পরীমনিকে তিন দফায় কত দিন করে রিমান্ড নেয়া হয় সে বিষয়ে আদালতকে জানান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলে, ‘রিমান্ড বিষয়ে আমরা গাউডলাইন দিতে চাই। কোন কোর্ট কত দিনের মধ্যে আবেদনের শুনানি করবেন, সে বিষয়ে। তবে জামিনের বিষয়টি অনুপযুক্ত হয়ে গেছে।’
আদালত আরও বলে, ‘ওই রিমান্ডের বিষয়ে আমরা নথি তলব করতে চাচ্ছি। তাদের (নিম্ন আদালত) কাছে কী তথ্য-উপাত্ত ছিল যে তার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হলো। আমরা তদন্ত কর্মকর্তা ও কেস ডকেট (মামলার নথিপত্র) তলব করব। এ ছাড়া, ম্যাজিস্ট্রেটদের সামনে কী তথ্য-উপাত্ত ছিল তাও চাইব।’
এ সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান আদালতকে বলেন, ‘কিন্তু সে (পরীমনি) তো এখন রিমান্ডে নেই।’
তখন আদালত বলে, ‘তার (বিচারিক আদালত) কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডের আবেদন করল, আপনি (বিচারিক আদালত) মঞ্জুর করে দিলেন। এগুলো তো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না, ঘটতে পারে না।’
এরপর আদালত এ বিষয়ে আরও শুনানি আদেশের জন্য বেলা ২টার সময় নির্ধারণ করে দেয়।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট পরীমনির জামিন শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। সেই রুলের পরিপ্রেক্ষিতেই নিম্ন আদালত জামিন শুনানি করে মঙ্গলবার পরীমনিকে জামিন আদেশ দেয়।
জামিন আদেশ গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর বুধবার সকালে মুক্তি মেলে পরীমনির। ২৭ দিন পর মুক্তি পেয়ে দুপুর ১টার দিকে বনানীতে নিজ বাসায় ফিরেছেন তিনি।
পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে গত ৪ আগস্ট মাদকদ্রব্যসহ আটক করে র্যাবের একটি দল। পরের দিন বনানী থানায় এ অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করে বাহিনীটি। এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিন দফায় নেয়া হয় সাত দিনের রিমান্ডে।