বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছাড়াই শিক্ষক তারা

  •    
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:৪৩

এনটিআরসিএ ও মাউশি বলছে, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়ায় শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছাড়া তারা কোনো শিক্ষকই নিয়োগ দিতে পারে না। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম মেনেই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর লালমাটিয়া মহিলা কলেজে এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছাড়াই চারজনকে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যারা ২০১৮ সালের মে মাস থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ ২০০৫ সালেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কলেজটির গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে তাদের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়, সেই বিজ্ঞপ্তি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলছে, এমপিওভুক্ত হওয়ায় কলেজটি এনটিআরসিএর সনদ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে না। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম মেনেই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধান বলছে, রাজধানীর সুপরিচিত এই কলেজে গত কয়েক বছরে এই চারজনসহ অন্তত ৬০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, যাদের অনেকেরই নেই শিক্ষক নিবন্ধন সনদ।

অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছাড়া নিয়োগ পাওয়া এই চারজনও সরকারি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন- এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে জাতীয় দৈনিকে এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে পাঁচজনকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয় ২০১৮ সালে। তবে তাদের মধ্যে শেখ রুবাইত-ই নাহার, নুসরাত রহমান, জান্নাতুল ফেরদৌস ও ওয়াহিদা পারভীনকে নিয়োগ দেয়া হয় এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছাড়াই। তাদের সঙ্গে একই সময়ে নিয়োগ পাওয়া পারমিতা সরকারেরই শুধু এনটিআরসিএর এই সনদ ছিল।

বিতর্কিতভাবে নিয়োগ পাওয়া ওই চারজনের মধ্যে শেখ রুবাইত-ই নাহার এখন গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন কলেজটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক।

এই শিক্ষকদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলামই তাদের নিয়োগ দিয়েছেন ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে, যাদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন ৩২ হাজার টাকা।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২৭ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে গণিত, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন টেকনোলজি এবং আইন বিষয়ে সাতজন করে প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়।

অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, এনটিআরসিএর অনুমোদন ছাড়া কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর বা তৎপরবর্তী সময়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কোনো পদে নিয়োগ দিলে তা অবৈধ নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সবকিছু উল্লেখ থাকলেও শিক্ষক নিবন্ধন সনদের কথা ছিল না, যা পূর্বপরিকল্পিত এবং নিয়োগবিধি পরিপন্থি বলে মনে করছেন কলেজসংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটির এক শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লালমাটিয়া মহিলা কলেজটি সরকারীকরণের প্রক্রিয়ায় আসায় অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম নিয়মবহির্ভূতভাবে তাদের নিয়োগ দিয়েছেন, যা কলেজটির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

আরেক শিক্ষক বলেন, ‘অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম ১৩তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। হিসাব বিজ্ঞানের এই অধ্যাপকের সরকারি কলেজেই চাকরি করার কথা। কিন্তু তিনি ২০১২ সাল থেকেই চাকরি করছেন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে।

‘যার মধ্যে প্রথম চার বছর প্রেষণে, তার পরের চার বছর লিয়েনে এবং বর্তমানে সংযুক্ত ওএসডি থেকে লালমাটিয়া মহিলা কলেজে চাকরি করছেন, যা বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (বিএসআর) পার্ট-১-এর ৩৪ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’

আলোচিত ওই নিয়োগে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া নুসরাত রহমানের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।

তিনি বলেন, ‘আমার এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট নেই। কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমাকে দুই-তিন বছরের মধ্যে সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। আমরা এখানে এমপিওভুক্ত নিয়োগ না। আমাদের নিয়োগ হয়েছে অনার্সের জন্য। স্থায়ী নিয়োগ হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, এটা সরকারি হলে আমরা সরকারি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’

নুসরাত রহমানের সঙ্গে প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌসও শিক্ষক নিবন্ধন সনদ না থাকার কথা স্বীকার করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারণ কলেজ কর্তৃপক্ষ যখন সার্কুলার দেয়, সেই সার্কুলারের শর্তের মধ্যে এনটিআরসিএ সার্টিফিকেটের কথা উল্লেখ ছিল না। তাই আমার লাগে নাই।’

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। তার দাবি, নিয়োগ নিয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি।

অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই নিয়োগে অনেকের এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট নাও থাকতে পারে। হয়তো কারও আছে, কারও নেই। তবে এভাবে নিয়োগ দেয়ার নিয়ম আছে।

‘স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক হলেও কলেজে বাধ্যতামূলক না। আমার মতে এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। তাছাড়া ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।’

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের এসব নিয়োগ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রভাষক পদে শিক্ষক নিবন্ধন সার্টিফিকেট ছাড়া নিয়োগ হবে না। পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে একজনের নিবন্ধন সার্টিফিকেট আছে, চারজনের নেই। নিবন্ধন সার্টিফিকেট ছাড়া এই চারজনের নিয়োগ ঠিক হয়নি।’

তিনি জানান, এনটিআরসিএর আইনে বলা আছে, এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে না।

মাউশির তৎকালীন সহকারী পরিচালক (কলেজ শাখা-১) এ কে এম মাসুদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা কলেজটি পরিদর্শন করেছিলেন।

নিউজবাংলা কলেজটিতে তার পরিদর্শনের বিষয়টি জানার পর অনিয়মের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ কে এম মাসুদ বলেন, ‘এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট ছাড়া নিয়োগ হতে পারে না। স্থায়ী নিয়োগ হলো কী করে? এটা সম্ভব না। এনটিআরসিএ সনদ বাধ্যতামূলক। সে ক্ষেত্রে এই নিয়োগটা বৈধ না। ২০০৬ সাল থেকে এই নিয়ম চালু হয়েছে। শিক্ষক নিবন্ধন সার্টিফিকেট ছাড়া স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হওয়াটা বৈধ না।’

মাউশির আইন শাখার প্রধান সিদ্দিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেয়, সেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি নিয়ম মানতে বাধ্য। লালমাটিয়া মহিলা কলেজ এমপিওভুক্ত। তারা এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে না।’

কলেজ ফান্ড থেকে যেসব শিক্ষক বেতন পান তাদের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০০৫ সালের পর থেকে এমপিওভুক্ত কলেজে যাদের নিয়োগ হবে, হোক তারা কলেজ ফান্ড থেকে বেতন পাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক।

‘কারণ ওই কলেজটা তো এমপিওভুক্ত। কলেজটির অন্য অনেকে সরকারি বেতন পাচ্ছেন। কলেজটি এমপিওভুক্ত হওয়ায় তারা সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন। সুতরাং তাদের সরকারি নিয়ম মানতে হবে। এ ছাড়া নিয়োগ বৈধ হবে না। এখানে এনটিআরসিএ সার্টিফিকেট ছাড়া নিয়োগই বৈধ হবে না।’

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বচ্ছতা সবখানেই থাকা দরকার। কলেজটির প্রিন্সিপালও সরকারি চাকরিজীবী, বিসিএস ক্যাডার। এখন তিনি ডেপুটেশনে আছেন। একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সরকারি আইন-কানুন তার অবশ্যই মানা উচিত ছিল। নিয়োগে অনিয়ম হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

এ বিভাগের আরো খবর