জাল টাকা রাখার অভিযোগে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় সেনাবাহিনীর বরখাস্তকৃত কর্নেল শহিদ উদ্দিন খান এবং তার স্ত্রী ফারজানা আনজুম খানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাদের আরও ৬ মাস কারাভোগ করতে হবে।
ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সৈয়দা হাফছা ঝুমা বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার অপর দুই আসামি সৈয়দ আকিদুল আলী ও খোরশেদ আলম পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে।
আকিদুল ও খোরশেদ কারাগারে রয়েছেন। রায় ঘোষণার আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
এ মামলায় খালাস পেলেও অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের মামলায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। এ কারণে তারা কারামুক্ত হতে পারছেন না।
কর্নেল শহিদ উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফারজানা আনজুম লন্ডনে পলাতক। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ সাজা পরোয়ানা জারি করেছে।
আরেক আসামি জহুরুল হক খন্দকার মারা যাওয়ায় তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কবীর আহাম্মদ রুমী নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
কী অভিযোগ শহিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে
শহিদ উদ্দিন খানের স্ত্রীর মালিকানাধীন ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন বারিধারা ডিওএইচএসের ২ নম্বর রোডের ১৮৪ নম্বর বাসা থেকে দীর্ঘদিন একটি সংঘবদ্ধ চক্র সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে পুলিশ জানতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিনসহ একটি পিস্তল, ছয়টি গুলিভর্তি ম্যাগাজিনসহ আরেকটি পিস্তল, একটি শর্টগান, দুটি কার্তুজ এবং শর্টগানের দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া তাদের শয়নকক্ষের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে এক হাজার টাকার তিন বান্ডিল নোট যার পরিমাণ তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া আরও এক হাজার টাকার তিন বান্ডিল জাল টাকা উদ্ধার করা হয়, যার পরিমাণও তিন লাখ টাকা।
এ ঘটনায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ফেইক কারেন্সি নোট টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) বিপ্লব কিশোর শীল ওই দিনই ক্যান্টনমেন্ট থানায় অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা করেন। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনেও একটি মামলা করা হয়।
পরে ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এরপর আদালত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে।
অস্ত্র আইনের মামলায় গত বছরের ১০ নভেম্বর শহিদ উদ্দিন খানসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
শহিদের নামে আরও যেসব মামলা
বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলা ছাড়াও বরখাস্ত কর্নেল শহিদ উদ্দিন খান, তার স্ত্রী ফারজানা আনজুম খান, সৈয়দ আকিদুল আলী ও খোরশেদ আলম চৌধুরীর নামে ক্যান্টনমেন্ট থানায় অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। সে মামলায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
কর ফাঁকির একটি মামলা আছে শহিদ উদ্দিন খানের নামে। ওই মামলায় অপ্রদর্শিত আয় ও মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য বিচারিক আদালত তাকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
ভুয়া দলিল তৈরি করে জমি বিক্রির একটি মামলা আছে শহিদ উদ্দিনের নামে। সে মামলায় বরখাস্ত কর্নেল শহিদ উদ্দিনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
শহিদের নামে মানি লন্ডারিং মামলার কার্যক্রম চলমান। সিআইডি মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণী জমা না দেয়ার কারণে শহিদের নামে দুদকের করা মামলার কার্যক্রম তদন্তাধীন।
চেক জালিয়াতির মামলায় শহিদের পলাতক স্ত্রী ফারজানা আনজুম খান ও ২ মেয়ের প্রত্যককে ৩ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত।