বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৪৩ বছরে সবচেয়ে দুরবস্থায় বিএনপি

  •    
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:০৭

এক যুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এর কর্মীরা নিষ্ক্রিয়। নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখছেন অনেকে। সাংগঠনিকভাবে দলটি এখন অনেক দুর্বল। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সামর্থ্য কমে আসছে।

বাংলাদেশে অন্যতম বড় দল বিএনপি ৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময় বা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও বেড়েই চলছে। সেই সাথে নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে তারা।

১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবাষিকী। সেটিকে সামনে রেখে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতারা হতাশা কাটিয়ে সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করার বিষয়ে জোর দেয়ার কথা বলেছেন। এক দফা আন্দোলনের ডাকও দিচ্ছেন।

তবে ফলপ্রসূ কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এমনকি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেও তাদের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।

খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে কারাবন্দি দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে। তাকে মুক্ত করতে বিএনপি কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।

দলটির নেতা-কর্মীদের অনেকের মাঝে এ নিয়ে তাদের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নির্বাসনে রয়েছেন। দেশে তার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা হয়ে রয়েছে।

দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে যে সদস্যরা রয়েছেন, তারা তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করেই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

কিন্তু স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেউ দলের ভেতরে প্রশ্ন ওঠা বা সমালোচনার ভয়ে নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নেন না বলে তাদের মাঝে অভিযোগ রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে দলটির অনেকে বলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে কোন্দল এবং দ্বন্দ্ব চলছে।

তৃণমূলের নেতারা বলছেন, তারা সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি চাইলেও নীতিনির্ধারক কমিটি সেটাকে বারবার দমিয়ে দিচ্ছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ৫ বছরের সাজা পেয়ে কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বারবার আন্দোলনের ডাক দিয়েও ব্যর্থ

পুনরায় ক্ষমতায় আসতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েও কোনো কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি দলটিকে। শেষ এক বছরে নানান সময় বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েও দলটি ব্যর্থ হয়েছে। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ থেকে একটি কর্মসূচি দেয়ার পর মাঠপর্যায়ে কাউকে দেখা যায়নি।

যুবদলের এক নেতা বলেন, ‘এই কর্মসূচিগুলো নামেমাত্র। অনেকে বছর খানেক আগের ছবি এনে সন্ধ্যাবেলায় পার্টি অফিসে জমা দিয়ে দেখায়, তারা মিছিল করেছে।

‘আন্দোলন, মিছিলে যাবেই বা কী করে? তারা তো কর্মীদের মূল্যায়ন করতে জানেন না। কর্মীরা কেন তাদের জন্য রিস্ক নেবেন?’

গত কয়েক মাসে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন সদস্য, বিশেষ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বারবার এক দফা আন্দোলনে নামার আহবান জানান, কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। তবে সেই আন্দোলনের কোনো দিনক্ষণ তিনি জানাতে পারেননি।

এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজনীতির বড় শিক্ষা হলো ধৈর্য। ধৈর্য ধরেন, বিএনপি এখন ঐক্যবদ্ধ। শিগগির আমরা আন্দোলনে যাব জনগণকে সাথে নিয়ে। এর বিকল্প আসলে নেই।’

আগে কি বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ছিল না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবকিছুতেই ভালো-মন্দ থাকে। দলে থেকেও দলের মধ্যে কোন্দল লাগানোর চেষ্টা থাকে। এরা ষড়যন্ত্রকারী। এই আপস অ্যান্ড ডাউনগুলো কাটিয়ে উঠে আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য: এক দফা আন্দোলন।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন জোট গড়ে তোলে, যার প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন ড. কামাল হোসেন। তবে এই জোট এখন নিষ্ক্রিয়।

তবে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জমির উদ্দিন সরকার দলে এই কোন্দলের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের তো কিছু অপূর্ণতা আছেই। আমরা অকেজো হয়ে গেছি। স্বৈরাচার সরকার আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে আছে, আবার আমাদেরও ঐক্যবদ্ধ কোনো এনার্জি নেই। এইসব মিলিয়েই কিন্তু আমরা আজ স্থবির হয়ে পড়ছি।

‘তবে দ্রুত এই অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে আন্দোলনে যেতে হবে। কারও সিদ্ধান্তের জন্য বসে থাকা যাবে না। তৃণমূল থেকে শুরু করতে হবে এই বিদ্রোহ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্ষীয়ান আমরা এই রাজনীতিতে। আমাদের অভিজ্ঞতা এখন আর কেউ প্রায়োরিটি লিস্টেই রাখে না। ভুল সিদ্ধান্তে দলের আজ এই অবস্থা। আমরা নামেমাত্র পদে বহাল। সিদ্ধান্ত নিতে মতামত নেয়া প্রয়োজন, সেটা সবার। একতরফা সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করলে, যে যারমতো করে সিদ্ধান্ত নিলে রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর হওয়া যাবে না। আমাদের সম্মান আর মতাদর্শের জায়গাটাতে আরও কাজ করতে হবে।’

জোট নিয়েও জটিলতায় বিএনপি

গত নির্বাচনের সময় বিএনপি তাদের ২০ দলীয় জোটের বাইরে আরেকটি জোট করেছিল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে সেই জোট এখন নামেমাত্র। একে একে অনেক দলই এই জোট থেকে বেরিয়ে গেছে।

বিএনপিও বিব্রত এই জোট নিয়ে। বলছেন, জোট এখন তাদের কাছে গলার কাঁটার মতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘জোট করা হয়েছিল নির্বাচনের স্বার্থে। তবে জোটের দলগুলো বিএনপিকে সহযোগিতার চেয়ে বরং বিপদেই ফেলছে বেশি। না এখন তাদের গিলতে পারা যাচ্ছে, না উগড়ানো যাচ্ছে।’

বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি মাঠ পর্যায়ের ক্ষোভ

লম্বা সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতৃত্বের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে বারবার হতাশা সৃষ্টি করেছে বলে তাদের অনেকে বলেছেন।

দলের নেতারা মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগের কথা বলে আসছেন। কিন্তু সেই উদ্যোগে তেমন কোনো অগ্রগতি বা সাফল্য দেখছেন না বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অনেকে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দলটি ব্যর্থ হয়েছিল।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপির কৌশল নিয়ে দলের ভিতরে অনেক প্রশ্ন ওঠে। সেই নির্বাচনে সংসদকে অবৈধ বলে অভিহিত করার পরও বিএনপি তাতে যোগ দিয়েছে।

এসব কৌশলের কারণে মাঠ পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ হতাশা থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে তাদের অনেকে বলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল কর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করায় কোনো আন্দোলন নেই। সেখানে এই রাজনীতি করার মানে নেই। তারা ভয় পান, তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদই শেষ করতে পারছেন না। তারা প্রত্যেকেই বস হতে চান। কেউ কারও কথা শুনতে নারাজ। এভাবে একটা দল থাকে না। নামেমাত্র দল নিয়ে রাজনীতির কিছু নেই।’

এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এগুলো হলো দলের মধ্যে এক একটা কীট। এদের কাজই দলকে নিয়ে সমালোচনা করা। আমরা আমাদের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মধ্যেকার ঐক্য দেখে বিএনপিকে সরকার ভয় পায়। সামনে আরও পাবে। আন্দোলনের বিকল্প নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর