সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। বিএনপিদলীয় সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তার পক্ষে প্রচারে নেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বরং দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় শফির প্রতি ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড।
এ অবস্থায় শফি বিএনপির ভোট কতটা টানতে পারবেন এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিএনপির ভোট কার বাক্সে পড়বে?
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক ছাড়াও এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া। জুনায়েদ শুরু থেকেই তেমন প্রচারে নেই। তবে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন অন্য তিন প্রার্থী।
শফির ওপর দল নাখোশ থাকায় অন্য দুই প্রার্থী হাবিব ও আতিক চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপির ভোটও নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতা আর গোষ্ঠীভিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
প্রার্থী হওয়ার কারণে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে শফি আহমদকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। শুরুর দিকে শফির পক্ষে স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির কয়েকজন নেতা প্রচারে অংশ নেন। তবে কঠোর অবস্থানে থাকা বিএনপি এই দুজনকে বহিষ্কার করে। এরপর শফির পক্ষে প্রকাশ্যে বিএনপির আর কাউকে দেখা যায়নি। একা একাই ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।
সিলেটের বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রচারের মতো ভোটের মাঠেও নীরব থাকবেন তাদের নেতা-কর্মীরা। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বিএনপির কেউ। এই সরকারের অধীনে সকল নির্বাচনই তারা বর্জন করবেন বলে জানান বিএনপি নেতারা।
নির্বাচনী প্রচারে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী।
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এই তিন দলেরই এখানে বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে মনে করা হয়।
একসময় সিলেট-৩ আসন ছিল জাতীয় পার্টির দুর্গ। টানা তিনবার এই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান। ২০০১ সালের নির্বাচনে মুকিত খানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিলেও সিলেট-৩ আসন উন্মুক্ত রাখা হয়। সে নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। আর আতিকুর রহমান আতিককে আলাদা প্রার্থী দেয় জাতীয় পার্টি। বিএনপির প্রার্থী ছিলেন শফি আহমদ। এই দুজনকে হারিয়ে সেবার বিজয়ী হন মাহমুদ উস সামাদ কয়েস।
নিজ এলাকা জালালপুরে নির্বাচনি প্রচারের সময় জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক।
পরে ২০১৪ আর ’১৯ সালের নির্বাচনেও কয়েস সাংসদ নির্বাচিত হন। ’১৪-এর নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। আর ’১৯-এ প্রার্থী হলেও কয়েসের সঙ্গে পেরে ওঠেননি শফি। তবে মহাজোটের সমীকরণে পড়ে ২০০৮-এর পর এই আসনে আর প্রার্থী হননি আতিক।
শফি আহমদ চৌধুরীর দাবি, বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গেই রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নেতারা মাঠে না নামলেও কর্মীরা আমার পক্ষে প্রচারে। তারা আমাকে ভোটও দেবেন।’
জাতীয় শোক দিবসে তেতলী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব।
শফি এমন বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। একে তো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন, তার ওপর প্রচারের শুরুর দিকে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপির নেতাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে তাদের রোষানলে পড়েছেন শফি আহমদ। ফলে দলের ভোট ব্যাংকই এবার হারাতে হতে পারে শফি আহমদকে।
এ ছাড়া স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ অনেক দিন ধরেই প্রবীণ এই নেতার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ নির্বাচনে এই আসনে শফির পাশপাশি দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এম এ কাইয়ূম চৌধুরী।
বিএনপির এই ক্ষুব্ধ ও নিষ্ক্রিয় অংশকেই নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন হাবিব ও আতিক। নেতারা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকলেও বিএনপির সমর্থকদের নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছেন। এই ভোট যার বাক্সে পড়বে তিনি ভোটের লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে যাবেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘সব এলাকায় লাঙ্গলের পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলমত-নির্বিশেষে মানুষ আমার পক্ষে আছেন।’
আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘মানুষ উন্নয়য়ের পক্ষে। সিলেট-৩ আসনের মানুষ ৪ তারিখে উন্নয়নের পক্ষেই ভোট দেবেন।’
তবে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। তিনি বলেন, এই সরকার ও এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। তাই বিএনপি এই উপনির্বাচনে নেই। আমাদের নেতা-কর্মীরাও ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ইতিমধ্যে আমরা নেতা-কর্মীদের এই নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি।