একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আরিফুর রহমান। করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে অনলাইনে দিনের উল্লেখযোগ্য সময় অফিসের বিভিন্ন ভার্চুয়াল গ্রুপে যুক্ত থাকতে হয় তাকে। এ কারণে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। মোবাইল অপারেটর থেকে ৪ দিনের জন্য ১ জিবি ডাটা ৩৬ টাকায় নেন তিনি।
অফিস ও বাসায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট থাকায় মোবাইল ডাটা শুধু যাতায়াতের সময়ে সামান্য ব্যবহার করা হয় আরিফুরের। এতে ৩০০ মেগাবাইট ডাটাও শেষ হয় না। কিন্তু চার দিন পর আবার রিচার্জে কখনো আগের ডাটা ফেরত পান না।
তিনি বলেন, ‘আমার টাকায় কেনা ডাটা আমি আবার ফেরত পাব না কেন? আমি তো ইন্টারনেট নিচ্ছি একই অপারেটর থেকে। যে প্যাকেজই কিনি না কেন, পরেরবারের প্যাকেজে আমার ডাটা আমাকে ফেরত দেয়াই তো ন্যায়বিচার।’
চলতি মাসের শুরুতে অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন তিনি। তবে প্রায় মাস পার হলেও এখনও ডাটা ফেরত দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রীর সে নির্দেশনা তেমন কাজে আসছে না; সুফল পাচ্ছে না মুঠোফোন গ্রাহকরা।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের দাবি, তারা শর্তসাপেক্ষে ডাটা ফেরত দিচ্ছে।
এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপারেটরগুলোকে অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দিতেই হবে। এ নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে।’
জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রাহকদের অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা ফেরত দেয়া নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে। আমরা অপারেটরদের কিছু নির্দেশনাও দিয়েছি ডাটা ফেরত দেয়ার জন্য।
‘হয়তো সম্পূর্ণ কাজ হচ্ছে না, তবে কিছু কাজ হচ্ছে। অনেকে ফেরত দিচ্ছে, অনেকে হয়তো দিতে পারেনি। তবে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। অপারেটরদের কাছে ছক আকারে তথ্য চেয়েছি, কিছু পেয়েছিও। আমরা বিষয়টি স্টাডি করছি।’
গত ২ আগস্ট দেশের মোবাইল অপারেটরদের কার্যক্রম তদারকি করতে যন্ত্রপাতি কেনা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা কেটে না নিয়ে পরবর্তী সময়ে কেনা ডাটা প্যাকেজের সঙ্গে ফেরত দিতে হবে।
গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনা করে ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ অতি সংক্ষিপ্তভাবে নির্দিষ্ট না করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতি নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরগুলো আগে এই ডাটা ফেরত দিত। আমি নিজেও এই ডাটা ফেরত পেয়েছি। কিন্তু এখন তারা কেন দেয় না, তাদের কাছে এই প্রশ্নটা আমারও। সংক্ষিপ্ত ও আজেবাজে মেয়াদ দিয়ে যে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ করা হয়, তা বন্ধ করতে হবে।
‘তাদের কল ড্রপের টাকাও ফেরত দিতে হবে। এটা যুক্তিসংগতভাবে ভোক্তার অধিকার। সেই অধিকার তাদের দিতে হবে। একচেটিয়াভাবে প্রফিট করার জন্য কাউকে লাইসেন্স দেয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘টাকা দিয়ে ডাটা বা টকটাইম কেনার পরে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলে অব্যবহৃত ডাটা ও টকটাইম পরবর্তী রিচার্জের সময় পাওয়া যাচ্ছে না কেন? হিসাবটা খুবই সহজ; উত্তর খুবই সহজ। অব্যবহৃত এমবি দিয়ে বিভিন্ন প্যাকেজ তৈরি করে পুনরায় বিক্রি করা হচ্ছে গ্রাহকদের কাছে।’
ডাটা ফেরতের বিষয়টি গত ২২ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ভার্চুয়াল গণশুনানিতেও উত্থাপন হয়। অব্যবহৃত ডাটা (ইন্টারনেট) ফেরতের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিটিআরসি থেকে বলা হয়, ডাটা ফেরতের বিষয়ে কথা হচ্ছে; কমিটি গঠন করা হয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, বিটিআরসির বর্তমান নির্দেশনা মেনে এখন কিছু ডাটা ফেরত দেয়া হয়। তাতে দুইটি শর্ত মানতে হবে।
এর একটি হলো যে প্যাকেজের ডাটা অব্যবহৃত রয়ে গেছে, সেই একই প্যাকেজ আবার কিনতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হলো বিদ্যমান প্যাকেজ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই প্যাকেজটি আবার কিনতে হবে। তবে ভিন্ন প্যাকেজ কিনলে ডাটা ফেরত পাওয়া যায় না।
সব ডাটা ফেরত দেয়ার যে কথা হচ্ছে, তা নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা চলছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হলে অপারেটরগুলো তা কার্যকর করবে।
বিষয়টিকে হাস্যকর ও প্রতারণা বলছে গ্রাহকরা। ডাটার মারপ্যাঁচ থেকে গ্রাহকদের রেহাই দিতে অপারেটর ও বিটিআরসির প্রতি দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোবাইল অপারেটররা ডাটা নিয়ে যা করছে, তা এক ধরনের প্রতারণা। তাদের কথামতো আমাদের ডাটা ব্যবহার করতে ক্যালেন্ডার বা ডায়েরি মেনটেইন করতে হবে। তাতে দাগ দিয়ে রাখতে হবে, আমি কোন প্যাকেজ কবে কিনলাম, কবে মেয়াদ শেষ হবে।
‘এটা হাস্যকর। এ বিষয়ে বিটিআরসির পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এসব বিষয় আমরা বিটিআরসির গত গণশুনানিতেও উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু বিষয়গুলোর কোনো উত্তর বা সমাধান পাইনি।’
এর আগে গত ৩১ জুলাই করোনা মহামারির মধ্যে ঘরে বসে থাকা আয়-রোজগারহীন গ্রাহকের অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে মুঠোফোনভিত্তিক ইন্টারনেট ডাটা ও টকটাইমের মারপ্যাঁচ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। গণশুনানিতেও এ নিয়ে আপত্তি জানায় সংগঠনটি।