বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া কোথায়

  •    
  • ৩১ আগস্ট, ২০২১ ২৩:২৬

আনসার আল ইসলামের বেশিরভাগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে মেজর (বহিষ্কৃত) সৈয়দ জিয়াউল হক। তিনি দেশে আছেন, নাকি দেশের বাইরে পালিয়েছেন, তা কেউ নিশ্চিত নয়। ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়েছে।

ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টায় ২০১২ সালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। এই অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকায় দুই সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে যান জিয়া। এরপর তিনি যুক্ত হন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে, পরে যেটির নামকরণ করা হয় আনসার আল ইসলাম।

মেজর (বহিষ্কৃত) জিয়ার পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঘটে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। আনসার আল ইসলামের বেশিরভাগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি। এরইমধ্যে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়েছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার রাজধানীর কলাবাগানে সমকামীদের অধিকার বিষয়ক কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যা মামলার রায় হয়েছে। এতে জিয়াসহ ছয় জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, প্রায় এক দশকে তারা অন্তত চারবার জিয়ার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় তার অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তবে তাকে গ্রেপ্তারে বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই পালিয়ে যান তিনি।

মেজর জিয়া দেশেই আছেন, নাকি দেশের বাইরে পালিয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ত পুলিশের একাধিক ইউনিটের দায়িত্বশীলরা। তবে তাকে গ্রেপ্তার চেষ্টা কখনই থেমে ছিল না এবং সামনের সময়েও চলমান থাকবে বলে জানান তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গিবিরোধী ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপপুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে যতো ইনডিভিজুয়াল টেরোরিস্ট বা জঙ্গি রয়েছে, তাদের মধ্যে জিয়া হচ্ছেন মোস্ট ওয়ান্টেড। তাকে আইডেন্টিফাই করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা আমরা করছি।’

ব্লগার হত্যার যতগুলো মামলা আছে, প্রায় সবগুলোতেই মেজর জিয়ার নাম এসেছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

অভ্যুত্থান চেষ্টাকারী থেকে জঙ্গি নেতা

২০১২ সালে অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে সেনাবাহিনী। ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সৈয়দ জিয়াউল হক পালিয়ে গেছেন। তাকে ধরিয়ে দিতে ছবিসহ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়া হয় সে সময়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াসের অন্য পরিকল্পনাকারী মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক গত ২২ ডিসেম্বর (২০১১) অন্য এক কর্মরত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে তাকেও রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড তথা সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করার কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে প্ররোচনা দেন। ওই কর্মকর্তা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানালে সদ্য দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী মেজর জিয়ার ছুটি ও বদলি আদেশ বাতিল করে তাকে দ্রুত ঢাকার লগ এরিয়া সদর দপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়। বিষয়টি টেলিফোনে গত ২৩ ডিসেম্বর তাকে জানানো হলেও তিনি পলাতক থাকেন।’

জিয়া পালিয়ে যাওয়ার পরের বছর জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৩ সাল থেকে একে একে হত্যার শিকার হন ব্লগার রাজীব হায়দার, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান, ব্লগার অনন্ত দাস, ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ব্লগার নাজিম উদ্দিন, সমকামীদের অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়।

পুলিশ বলছে, এই ৯ হত্যাকাণ্ডের আটটিতেই জড়িত আনসার আল ইসলামের সদস্যরা। এর মধ্যে ছয়টি হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক।

জঙ্গি জিয়ার পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তার বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিল্লুল হক। গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে। পড়াশুনা করেছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। কলেজ জীবন শেষে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

জিয়ার বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকতেন সৌদি আরবে। সেই সুবাদে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আগেই কয়েকবার ওমরাহ করেছিলেন জিয়া। তিনি বরাবরই শিক্ষা জীবনে মেধাবি ছিলেন। কলেজ জীবনে তিনি ছিলেন সেরা অ্যাথলেট।

সৈয়দ জিয়াউল হক ১৯৯৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ক্যাডেট জীবনে তিনি ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুশাসন মেনে চলতেন বলে জানিয়েছেন তার স্কুলের বন্ধুরা।

২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে জিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় পুলিশ। জিয়া জঙ্গিদের যুদ্ধ ও বোমা তৈরিসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।

পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালে এবিটি প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই নিষিদ্ধ সংগঠনের অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে জিয়ার নাম সামনে আসে।

২০১৬ সালে ২ আগস্ট মেজর জিয়া ও তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেন তৎকালীন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। এরপর একই বছরের ৬ আগস্ট শহীদুল হক এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এ দুজনকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছি। এই লোকগুলো এই সমাজেই বসবাস করে, বাংলাদেশেই থাকে। কোনো না কোনো বাসায় বা বাড়িতে থাকে। প্রত্যেকটি লোক যদি সচেতন হয়, তারা যদি জানায় যে, এরা আমাদের বাড়িতে বা এলাকায় আছে, তাহলে জাতি উপকৃত হবে। আমরা তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখব।’

সিটিটিসির সাবেক প্রধান ও বর্তমান এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘মেজর জিয়া আত্মগোপনে আছেন। তাকে আটক করতে আমরা কিছু কৌশল অবলম্বন করছি। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাংগঠনিক অবস্থা এখন একেবারেই দুর্বল। সে যদি কখনও তার পুরাতন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে অবশ্যই ধরা পড়বে।’

লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় মেজর জিয়াসহ পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় হত্যায় মামলায় মেজর জিয়াসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার মামলায় মেজর জিয়াসহ আট জঙ্গির ফাঁসির রায় দেয় আদালত।

ব্লগার নাজিম উদ্দিন হত্যায় মেজর জিয়াকে পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা উল্লেখ করে মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

সর্বশেষ কলাবাগানে সমকামীদের অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যার রায় হয়েছে মঙ্গলবার। এতে মেজর জিয়াসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অব্যাহতি পেয়েছেন দুজন।

এ বিভাগের আরো খবর