টাঙ্গাইল পুলিশ অ্যাকাডেমির পরিদর্শকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় লালমনিরহাটে মামলা করতে গেলেও ঘটনাস্থল ঢাকায় হওয়ায় থানা থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা সেই সাত বছর বয়সী গৃহকর্মী হাসিনা খাতুনের বাড়ি আদিতমারী উপজেলার মহিষতুলি গ্রামে।
শিশুটির নানি আমেনা বেগম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে জানান, তাদের পাশের গ্রাম দুলালীর পুলিশ কর্মকর্তা আজাহার আলী সুমন টাঙ্গাইলে চাকরি করেন। তিনি লেখাপড়া করানোর কথা বলে বড় বোন মানিকজান বেগমের মাধ্যমে এক বছর আগে হাসিনাকে নিয়ে যান। তাকে রাখেন ঢাকার শ্যামলীতে নিজের পরিবারের সঙ্গে।
সেখানে তার স্ত্রী ডেইজী বেগম তাকে পড়ালেখা না করিয়ে বাড়ির কাজ করাতেন। নানা সময় তিনি তাকে পেটাতেন ও মারধর করতেন। এতে মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত তৈরি হয়েছে।
একপর্যায়ে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িচালকের মাধ্যমে রোববার বিকেলে মেয়েটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে ফিরে নানি আমেনা বেগম দেখেন, শিশুটির শরীরে অনেক ক্ষতচিহ্ন। তিনি বিষয়টি পুলিশ কর্মকর্তার বোনকে জানান।
মানিকজান বেগম স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ভালো মেয়েকে তার নানির কাছ থেকে নিয়ে আমার ভাইয়ের সঙ্গে পাঠাইছিলাম। বাচ্চাটাকে পুরো শরীরে মাইরে শেষ করে দিছে। আমি তাকে দেখতে যেতে চাইলে বা ফোন দিলে আমার ভাই আর তার বউ কথা বলতে দিতো না। বলত ভালো আছে।
‘আমাকে তাদের বাসার ঠিকানা পর্যন্ত দেয়নি যে মেয়েটার নানি গিয়ে তাকে দেখতে পারবে। এখন ড্রাইভারকে দিয়ে এই অবস্থায় মেয়েটাকে পাঠাইছে।’
স্থানীয়দের মাধ্যমে মেয়েটিকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিশু হাসিনা বলে, ‘আমাকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সব কাজ করাতো। কাজ করতে না পারলে বেত, বটি হাতের কাছে যা পেত তা দিয়েই মারত। একবার মাথা ফেটে গেছিল। তখন কোনো ওষুধ না দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখছিল যেন কেউ কান্না না শোনে।
‘আমাকে প্রতিদিন মারত। আমি অনেক কান্না করছি। তখন আরও মারত। এমন কোনো জায়গা নাই যেখানে মারেনি।’
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ দোলন জানান, শিশুটির সারা শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন আছে। কিছু নতুন, কিছু পুরোনো। তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুটি শুধু শারীরিকভাবেই না, মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
শিশুটির নানি সোমবার ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর নামে আদিতমারী থানায় মামলা করতে যান। তবে মামলা নেয়নি থানা।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, আইন অনুযায়ী ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেখানেই মামলা করতে হবে। এই মামলা আদিতমারী থানায় নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় সেই পুলিশ পরিদর্শক আজাহার আলী সুমনের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন বলেন, ‘মেয়েটির শরীরে যে দাগগুলো আছে সেগুলো সাধারণ ঘায়ের। আমার স্ত্রী তাকে কোনো নির্যাতন করেনি।’