গার্মেন্টেসে চাকরির সুবাদে স্ত্রী সাথীকে নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন সাব্বির হোসেন। তার বাসায় গ্রামের বন্ধু জয়নাল গত মে সাবলেট হিসেবে উঠেন। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই স্ত্রীর সঙ্গে জয়নালের সুসম্পর্ককে পরকীয়া সন্দেহে মনোমালিন্য শুরু হয়। মনোমালিন্যের জেরে স্ত্রীকে বাড়িয়ে পাঠিয়ে দেন সাব্বির। গ্রাম থেকে আরও দুই বন্ধুকে ডেকে এনে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৪ আগস্ট শ্বাসরোধ করে জয়নালকে হত্যা করেন সাব্বির।
রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় অজ্ঞাত গলিত মরদেহের (কঙ্কাল) পরিচয় উদ্ধার এবং ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মো. সাব্বির এবং তার দুই বন্ধু আনোয়ার হোসেন ও সুরুজ আলীকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম।
র্যাব জানায়, হত্যায় জড়িতরা জানিয়েছেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ গুম করার জন্য একটি পানির ড্রামের মধ্যে ফেলে দরজা বন্ধ করে বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। আর এই হত্যার পরিকল্পনা তারা করেন টিভি এবং মোবাইল ফোনে অপরাধ সংক্রান্ত বিদেশি সিরিয়াল দেখে। গ্রেপ্তার এড়াতে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখেন তারা।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম জানান, গত ২৮ আগস্ট দুপুরে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকায় একটি ৫তলা ভবনের ৩য় তলার ফ্ল্যাটের গোসলখানার পানির ড্রাম থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির লাশ পচে কঙ্কাল হয়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না।
ওই চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-১ তাৎক্ষণিকভাবে নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত এবং হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সঙ্গে ছায়া তদন্ত শুরু করে।
র্যাব-১ এর একটি তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রহস্য উদ্ঘাটনে বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করে। সোর্সের মাধ্যমেই ওই বাসায় সচরাচর যাতায়াতকারী একজন সন্দেহভাজনকে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার নাম আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলতে থাকে ওই ক্লুলেস মামলার জট। আনোয়ার জানান, একই গ্রামে আনোয়ারের প্রতিবেশী ভিকটিম জয়নাল। গত ১৪ আগস্ট থেকে তার বাবা-মা তাকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এছাড়া আরও জানতে পারে, ভিকটিম জয়নাল তার গ্রামের প্রতিবেশী আব্দুস সুকুরের ছেলে সাব্বির হোসেনের সঙ্গে ঢাকার আশুলিয়ায় একই বাসায় সাবলেটে বসবাস করে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ভোরে র্যাব-১ এর দল হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন সাব্বির হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও সুরুজ আলীকে আটক করে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল মোত্তাকিমের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। এছাড়া কঙ্কালপ্রায় গলিত মরদেহটি জয়নালের বলে নিশ্চিত করেন তিনি।