বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জিম্মিদশা থেকে ফিরলেন মরিশাসে ধর্ষণের শিকার তরুণীর বাবা

  •    
  • ৩১ আগস্ট, ২০২১ ২২:৩৬

অনেক অত্যাচার ও ঝক্কি পার করে মরিশাসে জিম্মি থাকা ওই তরুণীর বাবা সোমবার রাতে দেশে ফেরেন। ফিরে তিনি জানান মরিশাসের নির্যাতন ও হয়রানির কাহিনী।

পাচারকারীর খপ্পরে মরিশাস গিয়ে ধর্ষণের শিকার এক নারী দেশে ফিরলেও তার বাবাকে সেখানে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। অবশেষে জিম্মিদশা থেকে দেশে ফিরেছেন সেই তরুণীর বাবা।

তবে দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। তরুণী দেশে ফিরে এলেও তার বাবাকে আটকে রাখা হয় মরিশাসে। দেশে ফেরার কয়েক মাস পর তরুণী মামলা করেন রামপুরা থানায়। এই বিষয়ে নিউজবাংলা গত ১১ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তা নজরে আসে সংশ্লিষ্টদের।

অনেক অত্যাচার ও ঝামেলা পার করে মরিশাসে জিম্মি থাকা ওই তরুণীর বাবা সোমবার রাতে দেশে ফেরেন। ফিরে তিনি জানান মরিশাসের নির্যাতন ও হয়রানির কাহিনী।

ওই তরুণীর বাসা রাজধানীর দক্ষিণখানে। বাবা কাপড়ের ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গোটা পরিবার আর্থিকভাবে বিপাকে পড়ে যায়। এ অবস্থায় তার বাবা সংসারের খরচ জোগাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এক বন্ধুর পরামর্শে চাকরির সন্ধানে পরিচিত এক জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সির খোঁজ পান তিনি।

তারা তাকে মরিশাসে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ দেবে বলে জানায়। এর পরই প্রতারণা আর নির্যাতনের চক্রে পড়ে যান তিনি। পরে তার বাবাকেও নেয়া হয় সেখানে।

কী হয়েছিল তার সঙ্গে

মরিশাস থেকে ফিরে ওই তরুণীর বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মরিশাসে ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলে বাবুর্চির কাজ করতাম। মরিশাসে আমাকে নেয়ার পর মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দিত না তারা। মেয়েকে আমার থেকে আলাদা রাখত। আর দেখা করতে দিলেও সঙ্গে লোক থাকত পাহারায়।

‘পরে আমাকে রেখে আমার মেয়েকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। আমি তখনও জানতাম না, তারা আমার মেয়েকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে। আমার মেয়ে দেশে আসার পরে আমি জানতে পারি।’

তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে এই দেশে এসে মামলা করার পরে তারা আমাকে হুমকি দিতে থাকে। আমি যে বাবুর্চির সঙ্গে ভাত রান্না করতে যাই, সে আমার হাতে ইচ্ছা করে ভাতের মাড় ফেলে দেয়। আমার হাত পুড়ে যায়। নানা রকম ঝামেলা করে।’

জুলাইয়ের মাঝামাঝি কোম্পানির মালিক অনিল কোহলি (ভারতীয় নাগরিক) ও ওই কোম্পানির কয়েকজন থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে ওই তরুণীর বাবাকে গ্রেপ্তার করান।আরও পড়ুন: মরিশাসে ধর্ষণের শিকার তরুণী, বাবা জিম্মি

তিনি বলেন, ‘এক নারীর সহায়তায় তার জিম্মায় আমি থানা থেকে বের হই। তারা যে আমাকে ফাঁসিয়েছে, পুলিশ সেটা বুঝতে পারে।

‘আমার ভেতরে একটা ভয় ঢুকে যায়: এরা আমাকে যদি মেরে ফেলে! পরে আমি চাকরি ছেড়ে দেই। চাকরি ছেড়ে আমি একজনের কাছ থেকে নম্বর জোগাড় করে বাংলাদেশ দূতাবাসে সব জানাই। গত মাসের ২১ তারিখে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে মরিশাসের হাইকমিশনে জানায়। মরিশাস হাইকমিশন থেকে থেকে আমাকে টিকিট দেয় দেশে ফেরার।’

এরপর ঘটে আরেক ঘটনা। এক নারী এসে ওই তরুণীর বাবাকে একটা কাগজ দিয়ে বলেন, আগামি মাসে তাকে আদালতে যেতে হবে। তিনি কোনো এক নারীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসে আবার জানান এই ঘটনা।

তরুণীর বাবা বলেন, ‘বাংলাদেশ হাই কমিশন আমাকে মরিশাসের হাইকমিশনের কাছে পাঠায়। তারা আমাকে গত রোববারের বিমানের টিকিট দেয়। ওই দেশের পুলিশ আমাকে ইমিগ্রেশন পার করানো থেকে শুরু করে বিমানে উঠিয়ে দেয়া পর্যন্ত আমার সঙ্গে ছিল।

‘রোববার রাত ১১টায় বিমান মরিশাস থেকে দুবাই রওনা দেয়। সকাল ৬টায় আমি দুবাই পৌঁছাই। সেখানে ১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করে আমাদের আবার বিমানে তুলে দেয়। পরে সোমবার রাতে বাংলাদেশের দূতাবাসের লোক আমাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে আমার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়।’

তরুণীর বাবা আরও বলেন, ‘আমি আড়াই লাখ টাকা দিছি ধার-দেনা করে। আমার মেয়ের জীবন, আমার জীবন, আমার পরিবার সব বরবাদ করে দিছে ওরা। আমি এখন রাস্তার ভিখারি। তারা আমায় অনেক নির্যাতন করেছে। টানা ১৫ দিন আমাকে বের হতে দেয় নাই। আমি সাংবাদিক আর বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তাদের জন্য দেশে ফিরতে পেরেছি।’

মামলা করেছিলেন তরুণী

রামপুরা থানায় গত ৯ জুলাই করা মামলার এজাহারে ওই তরুণী বলেন, পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপ দেশ মরিশাসে নেয়ার পর পোশাক কারখানার মালিকসহ একাধিক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেন।

তারা হুমকি দেন, দেশে ফিরলে কাউকে কোনো অভিযোগ করা যাবে না। অভিযোগ করা হলে তাদের হাতে জিম্মি তার বাবাকে মেরে ফেলা হবে।

কোনো অভিযোগ করবেন না এমন শর্তে মুক্তি পেয়ে অবশেষে দেশে আসেন ওই তরুণী। তবে তার বাবা তখন মরিশাসে আসামিদের হাতে জিম্মি।

ওই তরুণী নিউজবাংলাকে জানান, ধর্ষণের কারণে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন মরিশাসে। আসামিরা সেখানে তাকে গর্ভপাত করান একটি হাসপাতালে। এতে তার জরায়ুতে সংক্রমণ ধরা পড়ে।

মামলার এজাহারে ওই তরুণী বলেন, মরিশাসে নেয়ার পর পোশাক কারখানার মালিকসহ একাধিক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেন।ছবি: নিউজবাংলা

চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই সংক্রমণের কারণে তার জরায়ুতে টিউমার অথবা ক্যানসার হতে পারে।

রামপুরা থানায় ওই তরুণী মানবপাচার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আলাদা ধারায় একটা মামলা করেন।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আকবর হোসেনকে। তিনি মেসার্স গোলাম রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। বাকি আসামিরা হলেন গোলাম রাব্বি, আক্তার হোসেন, শাহ আলম, ফোরকান, সিদ্দিক, আসলাম, ভারতীয় নাগরিক অনিল কোহলি এবং অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন।

২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর দেশে ফেরার তিন দিনের মাথায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই তরুণী। কিন্তু তার বোন দেখে ফেলেন ও তা ঠেকান।

এরপর তার সঙ্গে মরিশাসে হয়ে যাওয়া বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন বড় বোনকে। বড় বোন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাকে চিকিৎসাসহ কাউন্সেলিং দেয়া হয়।

এ ঘটনায় মামলার দিন রাত সাড়ে ৯টায় গ্রেপ্তার করা হয় রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনকে। মালিবাগ আবুল হোটেল সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরে আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলার দিন রাতেই একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিরা দেশের বাইরে থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না।’

এ বিভাগের আরো খবর