বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজার: এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর বিশেষ তহবিলে

  •    
  • ৩১ আগস্ট, ২০২১ ২১:৫০

২০২০ সালের শুরুতে পুঁজিবাজারের টানা দরপতন সামাল দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে পরিমাণ তহবিল হতে পারত, হয়েছে তার ৩০ শতাংশেরও কম। আর সেই তহবিল থেকে বিনিয়োগ হয়েছে ৫০ শতাংশের কম। এই বিনিয়োগ বিষয়ে এতদিন প্রতিবেদন দিতে হতো তিন মাস পর পর। এখন দিতে হবে প্রতি মাসে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহ দেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন কার্যত এই বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে।

এই তহবিল থেকে কী পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে, সে তথ্য প্রতি তিন মাসের বদলে এখন থেকে প্রতি মাসে পাঠাতে বলা হয়েছে।

অর্থ ও পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের তথ্য প্রতিদিন জানানোর আদেশ দেয়ার পর নতুন এই আদেশ এল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

২০২০ সালের শুরুতে পুঁজিবাজারের টানা দরপতন সামাল দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারে। ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকেও এমন তহবিল গঠন করতে পারে।

এই তহবিল আবার ব্যাংকের যে সাধারণ বিনিয়োগ আছে, তার বাইরে। ব্যাংকগুলো তার মোট ইক্যুইটির ২৫ শতাংশ এমনিতেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।

সে সময় এই তহবিল গঠনের সুযোগ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যত ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়।

তবে এখন বাজার যখন চাঙা, নিয়মিত দুই থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে, সে সময় এখন আবার পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১০ সালের মহাধসের আগে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো তাদের সীমার বাইরে বিনিয়োগ করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হঠাৎ করে সব বাড়তি বিনিয়োগ তুলে নেয়ার আদেশ দেয়ার পরেই মূলত বাজারে ধস নামে।

তবে এবার ব্যাংকের বিনিয়োগ তার সীমার বাইরে-এমন কোনো তথ্য মেলেনি। এই বিশেষ তহবিলের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।

ব্যাংকগুলো যত টাকার তহবিল করতে পারত, হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশের মতো।

৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংক মিলে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। একেকটি ব্যাংক গড়ে ১০০ কোটি টাকার কিছু বেশি দিয়েছে।

এর পুরোটা এখনও বিনিয়োগ করা হয়নি। এর মধ্যে শেয়ার কেনা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকার। হাতে আছে এখনও ১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা।

অর্থাৎ ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণের তহবিল গঠন হয়েছে, তার ৪৭ শতাংশ বিনিয়োগে এসেছে।

অর্থাৎ বিশেষ তহবিল থেকে যত টাকা বিনিয়োগ হতে পারত, তার ১৪ শতাংশ মাত্র বিনিয়োগ হয়েছে।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফ সাইট সুপাভিশন বিভাগ থেকে বিশেষ তহবিল বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালাসংক্রান্ত্র তথ্য প্রতি মাস শেষ হওয়ার পরবর্তী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংযুক্ত ছক অনুসারে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব ও বিও হিসাব বা হিসাবগুলোর বিবরণীসহ, তথ্যাদি অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগে দাখিল করতে হবে।

‘এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণদানকারী ব্যাংক ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে তা সমন্বিত আকারে ছকে সংযোজন ও বিবরণীর সফট কপি দাখিল করতে হবে।’

ছকটির সফট কপি প্রয়োজন অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন হতে সংগ্রহ করার কথা সার্কুলারে বলা হয়েছে।

এর আগে বিশেষ তহবিলে বিনিয়োগের তথ্য ৩ মাস পরপর পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে এটা পাঠাতে হতো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের আদেশে বিএসইসির অসন্তোষ

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের তথ্য চেয়ে গত ১২ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেকটি আদেশ আসে। সেই আদেশে খুশি হতে পারেনি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সেই আদেশে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, মুদ্রাবাজারে দৈনিক লেনদেনের তথ্য সংযুক্ত ছক অনুযায়ী পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিনের নিজস্ব বিনিয়োগের তথ্য পাঠাতে হবে। যেখানে নতুন বিনিয়োগ, মোট বিক্রয়মূল্য ও নিট এক্সপোজারের তথ্য দিতে হবে।

দৈনিক মার্জিন ঋণের পরিমাণ, স্থিতি ও সমন্বয়ের পরিমাণ জানাতে হবে। এছাড়া নিজস্ব ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির দৈনিক ঋণসীমা, তহবিল ছাড় ও সমন্বয় এবং নিট এক্সপোজারের তথ্য দিতে হবে। প্রতিদিন বিকাল ৫টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগে এ তথ্য জমা দিতে হয়।

এই নির্দেশনা দেয়ার পর বিএসইসির পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বক্তব্য আসেনি। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করেন, এমন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে নয় বছর আগের একটি নির্দেশনা পাঠিয়ে দেয়া হয় গত ১৫ আগস্ট।

নির্দেশনাটি ছিল পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করা সংক্রান্ত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি করেনি, যদিও তাদের নির্দেশনাটি পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করতে পারত।

পুরনো নির্দেশনা পাঠানোর বিষয়ে সেদিন বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলা বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞজনরা মতামত দিয়ে থাকেন। অনেক সময় কমিশন যে উদ্দেশ্যে নির্দেশনা জারি করে তার ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়।

‘এমন অবস্থায় পুঁজিবাজার অভিজ্ঞজনের মতামতের পাশাপাশি কমিশনের মতামত নেয়া হলে তা বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে এবং এবং এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও আছে, যেখানে কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয়টি বলা আছে।’

যে নির্দেশনা ছিল প্রতিষ্ঠান বিভাগের

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২০১২ সালে জারি করা ‘পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত/বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে আলোচনা, পরামর্শ ও সমন্বয়’ শীর্ষক আদেশে পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করতে পারে এমন আটটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত/বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা/সমন্বয়/ পরামর্শ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল-

>> সরকারি কোম্পানি বা কোনো কোম্পানির সরকারি শেয়ার পুঁজিবাজারে আসা, না আসা সংক্রান্ত বিষয়।

>> জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত যে কোনো কর প্রস্তাব, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ।

>> জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক পুঁজিবাজার সংক্রান্ত যে কোনো প্রজ্ঞাপন বা নীতি।

>> পুঁজিবাজার বা তৎসংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয় সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে কোনো প্রজ্ঞাপন বা নীতি।

>> পুঁজিবাজারের বিভিণ্ন স্টেক হোল্ডার, যেমন- স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল, ডিপোজিটরি, অংশগ্রহণকারী, ব্রোকার, ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে- কোনো সংস্থা/কর্তৃপক্ষ/সরকারি প্রতিষ্ঠানের যে কোনো প্রজ্ঞাপন বা নীতি।

>> সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা বা না করা সংক্রান্ত যে কোনো প্রজ্ঞাপন বা নীতি।

>> তথ্যভিত্তিক নয়, শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে মিডিয়াতে সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কোনরূপ মন্তব্য।

এবং

>> কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে কোন উদ্যোগ নেয়া সম্বপর্কিত তথ্য-যা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।

এ বিভাগের আরো খবর