নওগাঁয় কাঁচা মরিচের দাম কমতে শুরু করেছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতাদের মধ্যে। কিন্তু ফসলের দাম হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে ভালো।
এক মাস আগেও প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারি বাজারে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হতো। আর খুচরা বাজারে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে। তবে এক সপ্তাহে বদলে গেছে সেই চিত্র। পাইকারি বাজারে এখন মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম কমে গেছে। এ ছাড়া বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা থেকেও মরিচ আসছে নওগাঁয়।
সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের চাষি রমজান আলী জানান, ‘হামার দুই বিঘা জমি মরিচের আবাদ করিছি। গত সপ্তাহে পাইকারি দরে হামি ১০০ টেকা কেজি হিসেবে ৪ হাজার টেকা মণে মরিচ বিক্রি করছিলাম। তবে এখন দাম কুমা গেছে। প্রতি কেজি মরিচ ৪০ থ্যাকা ৫০ টেকা কেজি দরে ২ হাজার টেকা মণে বিক্রি করা লাগিচ্ছে। মরিচের উৎপাদন বাড়ার জন্নি দাম কুমা গেছে।’
সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের চাষি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘হামার ১০ কাঠা জমিত কাঁচা মরিচের আবাদ করিছি। সপ্তাহে ক্ষেতোত থ্যাকা দুইবার মরিচ তোলা যায়। কিছুদিন আগে হামি ১০০ টেকা কেজি দরে পাইকারি মরিচ বিক্রি করিছি প্রায় দেড় মনের মতন। ১৫ দিন আগেও ৮০ টেকা দরে আধা মণ মরিচ বিক্রি করিছি। আর এখন ৪০ থ্যাকা ৫০ টেকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করা লাগিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১০ কাঠা জমিত শ্রমিক, সার ও আইল বাঁধাসহ মরিচ ক্ষেতোত প্রায় পাঁচ হাজার টেকার মতন খরচ হয়। আশ্বিন মাসোত জমিত চারা রোপণ করা লাগে। চারা বড় হয়া ওঠার পর কীটনাশক আর ভিটামিন দিতে প্রতি সপ্তাহে ৩০০ টেকা থ্যাকা ৪০০ টেকা খরচ হয়। প্রায় পাঁচ মাসের এ আবাদে এই পরিমাণ জমিত থ্যাকা লক্ষাধিক টেকার মরিচ বিক্রি করা যায়।’
শহরের তাজের মোড়ের কাঁচা বাজারের দোকানি ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগেই ১০০ টাকা দরে পাইকারি হিসেবে চাষিদের কাছে থেকে কাঁচা মরিচ কেনা হতো। আর সেই মরিচ খুচরা বিক্রি করতাম ১২০-১৩০ কেজি দরে। তবে বর্তমানে মরিচের উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে।
‘এখন আমরা চাষিদের কাছে থেকে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে মরিচ কিনে খুচরা ৬০-৭০ কেজি হিসেবে বিক্রি করছি। এবার জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মরিচের আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা থেকে নওগাঁয় মরিচ ঢুকছে। যার কারণে দাম কমে গেছে।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। শুধু সদর উপজেলাতেই ১৮০ হেক্টর জমিতে মরিচ উৎপাদন হয়েছে।