শামসুল ইসলাম নির্বাক চেয়ে থাকেন তিস্তার দিকে। তার ১০ বিঘা জমি গ্রাস করেছে নদী। সহায়সম্বল কিছু নেই। জমি হারিয়ে স্পার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন, নদীর পানি বেড়ে সেখানেও ভাঙন ধরেছে। ঘর ভেঙে সরতে হচ্ছে অন্য জায়গায়। সাতজনের সংসার চলে কৃষিকাজ করে। গেল কয়েক দফা বন্যায় তাও বন্ধ। জীবিকার আর কোনো পথ নেই। ৫৫ বছর বয়সী শামসুল এখন নিরুপায়।
জমি হারিয়ে তিস্তাপাড়ে বসে শুকুর আলী জানান কষ্টের কথা। বলেন, ‘বাবার এক একরের বেশি জমি গেছে তিস্তায়। এবার দুই বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি, তাও চলে গেছে তিস্তায়।’
শামসুল, শুকুর শুধু নয়, নীলফামারীর ডিমলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি এলাকার ইমান আলী, আবেদ আলী, নবির উদ্দিনের সব নিয়ে গেছে তিস্তা।নবির উদ্দিন বলেন, ‘২০ বিঘা জমিতে আমন লাগিয়েছি। নদীগর্ভে গেছে ধানক্ষেত। ভাঙন আতঙ্কে বসতঘর সরিয়েছি সকালে।’
মঙ্গলবার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি এলাকায় দেখা গেছে নদীর পাড় থেকে ঘর সরাতে ছোটাছুটি করছেন মানুষ।
স্পার বাঁধ ঘিরে চারটি ওয়ার্ডের প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। তারা সবাই পড়েছেন আতঙ্কে। সেখানে কুটিপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প পানিতে ভাসছে। ৩০ পরিবার সরে গেছে উঁচু স্থানে।
জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। এ কাজ তদারকি করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিস্তায় কয়েক দফা পানি বৃদ্ধির ফলে ভেন্ডাবাড়ি চর প্লাবিত রয়েছে এক মাস ধরে। সবশেষ রোববারের পানি বৃদ্ধিতে রাতে ভাঙন ধরে স্পার বাঁধের শেষাংশে।তিনি বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানে ১৫০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় তিস্তার নতুন চ্যানেল তৈরি হয়েছে। এর ফলে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবার। নদীগর্ভে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাঁধটি বিলীন হয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষ হারাবে বসতভিটা, হারিয়ে যাবে শত শত একর জমি।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, বাঁধটি ঘিরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস। রোববার রাত থেকে নিদ্রাবিহীন সময় কাটাচ্ছেন এলাকার মানুষ। দুই শতাধিক পরিবারের বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন ভাঙনের মুখে রয়েছে শত শত কৃষক পরিবার।তিনি বলেন, ‘বাঁধ রক্ষাসহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ভাঙনের মুখে পড়া বাঁধটি রক্ষায় আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ৯ টন চাল, ২৫০ জনকে শুকনা খাবার সরকারিভাবে বিতরণ করা হয়েছে।’
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা জানান, ‘বাঁধটি রক্ষায় আমরা চেষ্টা করছি। ১৫০ মিটারের মতো ভেঙে গেছে। এতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
‘এক হাজার বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। যত প্রয়োজন বালুর বস্তা ফেলে বাঁধটি টিকিয়ে রাখার কাজ করব। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, টেকসই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’