বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার বাসভবনে থাকার চেয়ে কারাগারে থাকা ভালো বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে না ফিরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভালো বলেও মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফাউন্ডেশনের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন জাফরুল্লাহ। সংগঠনের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করা হয় ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা’ বিষয়ে।
বিএনপিকে আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ফিরোজায় থাকার চেয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের জেলে থাকা বেটার। তাকে দিয়েই বিএনপির ভবিষ্যৎ। রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড হওয়ার দুই বছর পর সাজা স্থগিত করে গত বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ছয় মাসের জন্য মুক্ত করা হলেও পরে আরও দুই দফায় মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, খালেদা জিয়ার এভাবে মুক্তি নেয়া তার জন্য অবমাননাকর। বিএনপির উচিত তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে যাওয়া।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখনও জেলেই আছেন। ওনার জামিন নাই।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী
খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার দিন যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী তার ছেলে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে বিএনপি। সম্প্রতি তারেককে পড়ালেখা করা ও রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে এক ছাত্রদল নেতার রোষানলে পড়েন জাফরুল্লাহ। এরপর থেকে তিনি এই বিষয়ে চুপ ছিলেন।
যে পরামর্শ দিয়ে ছাত্রদল নেতার আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন তিনি, সেই পরামর্শ আবার তুলে ধরেন। তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি ওই দেশে থাকেন। জাইমাকে পাঠিয়ে দেন।’
বিশ্ব রাজনীতিতে অবদান রাখেন: প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করেও বক্তব্য রাখেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপনার আয়ু শেষ হয়ে গেছে। এই দায়িত্ব শেখ রেহানার হাতে দিয়ে দেন। তোফায়েলকে দেন। মতিয়া চৌধুরীকে দেন। জাতীয় সরকার করেন।
‘ডা. কামাল হোসেনকে ডাকেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ডাকেন। আপনি বিশ্বরাজনীতিতে অবদান রাখেন। রোহিঙ্গা সমস্যা আপনি এনেছেন। এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আপনার।
‘এ জন্য তুরস্কে যান, ইরানে যান, পাকিস্তানে যান। পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য অনেকে সমালোচনা করবে। পাকিস্তানের বুকে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘তোমরা ৭১ সালে যে অন্যায় করেছ তার জন্য ক্ষমা চাও। পাবলিকলি আমাদের জনগণের কাছে ক্ষমা চাও। ক্ষমা চাওয়ার পর তোমাদেরকে আমরা ভাই হিসেবে মেনে নেব। ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত কিছু হবে না।'”
লুই আই কানের নকশা কোরআনের বাণী নয়
প্রখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের নকশায় নেই বলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের সমাধি সরানোর প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সরকার মূল নকশায় ফিরতে চায় বলে যে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার লুই আই কানের নকশা, এটা কোরআনের বাণী নয়।’
১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে ব্যর্থ অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার মাস দুয়েক পর সেনাশাসক জিয়ার মরদেহ রাঙ্গুনিয়া থেকে তুলে এনে চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করার কথা জানানো হয়। তবে সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যে কফিন সমাহিত করা হয়েছে, তাতে জিয়ার মরদেহই ছিল না।
গত ২৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি সামনে আনার পর থেকে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক চলছে। এর মধ্যে সমাধিটি এখান থেকে সরানোর বিষয়ে পুরোনো আলোচনা আবার সামনে এসেছে, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে হত্যার মাস দুয়েক পর এই কফিনটি সমাহিত করা হয় চন্দ্রিমা উদ্যানে। এতে জিয়াউর রহমানের দেহাবশেষ ছিল না বলে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সেখানে আছে থাকতে দেন। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার লুই আই কানের নকশা-এটা কোরআনের বাণী নয়। লুই আই কানের নকশায় মেট্রোরেল ছিল? এখন কি মেট্রোরেল উঠাই নিয়ে যাবেন? তমিজউদ্দীন সাহেবের কবর উঠাই নিয়ে যাবেন? তমিজউদ্দীন সাহেবের কোনো অবদান নাই? পাশে যে বাড়িঘর হচ্ছে তা কি লুই আই কানের নকশায় ছিল? অকারণে ধাপ্পাবাজি করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কবর নিয়েও রাজনীতির করার চেষ্টা করছি। পাগল হয়ে গেছি আমরা, উন্মাদ হয়ে গেছি। অর্বাচীনের মতো বক্তব্য দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।’
জিয়ার দেহাবশেষ আছে কি না তার প্রমাণ করতে ডিএনএ পরীক্ষার যে চ্যালেঞ্জ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী দিয়েছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন জাফরুল্লাহ।
বলেন, ‘ডিএনএ টেস্ট করতে হলে তো অনেকের ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। অকারণে এসব বিতর্কে যাওয়া উচিত না। এটা অন্যায়, বেকুবের কাজ হবে।
‘আজ যদি কেউ বলে বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়ায় আছেন কি না, তার ডিএনএ টেস্ট… এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছু না, অবান্তর৷’