জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার নীতিমালা পাস হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটে পাশ হওয়ার পর এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। তবে অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা গেলে সশরীরে পরীক্ষা নেয়া হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে ৫৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক।
তিনি জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো বিভাগ বা ইন্সটিটিউট অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে সেটি অবশ্যই পরীক্ষা নেয়ার চার সপ্তাহ আগে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে। পরীক্ষা হবে কোর্সের ৫০ শতাংশ নম্বরের আর সময়ও কমিয়ে অর্ধেক করা হবে। খাতা মূল্যায়নের সময় সেগুলোকে পূর্ণাঙ্গ করে ফল প্রকাশ করা হবে।
উপাচার্য বলেন, ‘আমরা সরকারের বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত দেখে পরীক্ষা পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নিব। সরকারি সিদ্ধান্ত ছাড়া আমরা খুলতে পারব না। নীতিমালা সিন্ডিকেটে পাস হলে আমরা দেখব, সরাসরি নেয়া যায় কি না।
‘সরাসরি নেয়া গেলে আমরা সরাসরিই পরীক্ষা নিব। আর বিশ্ববিদ্যালয় না খোলা গেলে অনলাইনে পরীক্ষা নিব। সেটি অবশ্যই চার সপ্তাহ আগে নোটিশ দিয়ে।’
অ্যাকাডেমিক কাউন্সলের সভায় অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা পাসের বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা অফলাইন ও অনলাইন দুইভাবেই পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে। অক্টোবরের মাঝামাঝি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আভাস দিয়েছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সম্ভব হলে আমরা অফলাইনেই পরীক্ষা নেব।’ তিনি বলেন, ‘অফলাইনে নেয়া না গেলে আমরা নীতিমালা চূড়ান্ত করছি। ওই অনুসারে অনলাইনে হবে। যেভাবেই পরীক্ষা হোক এর চার সপ্তাহ আগে শিক্ষার্থীদের জানানো হবে।’
ড. রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সম্ভাব্য তারিখ বা পরীক্ষার তারিখ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। সিন্ডিকেটে পাস হবে। অফলাইন বা অনলাইন দুইভাবেই পরীক্ষা নেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মিটিং করতে করতে ও তো ইন্টারনেট চলে যায়, কারেন্ট চলে যায়, তখন আমরাও ডিসকানেক্ট হয়ে যাই। পরীক্ষার সময় যদি কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে দিতে ডিসকানেকটেড হয়ে যায় তবে পাঁচ মিনিটের ভেতরে দায়িত্বরত শিক্ষককে জানাতে হবে। তখন তাদেরকে আমরা আবার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করব। এ বিষয়টি অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গুগল ক্লাসরুম বা জুমের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া যাবে। এখন থেকে যেকোনো বিভাগ অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবেন। তবে সেটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।’
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দ্রুত অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ ও প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।
এর আগে চলতি বছরের মে-জুন মাস থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা এমনকি নীতিগত সিদ্ধান্তের খবর পাওয়া যায়। তবে এ বছরের ১৩ জুন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ১০ আগস্ট থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকে থাকা সব সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তার প্রায় এক মাস পর ১২ জুলাই অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের এক জরুরি সভায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি বিবেচনায় ১০ আগস্ট অনুষ্ঠেয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে চার সপ্তাহ সময় দিয়ে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।