জাপানি মা-বাংলাদেশি বাবার দুই মেয়েসন্তানকে কার জিম্মায় রাখা হবে এ নিয়ে শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট বলেছে, আমরা চাই সন্তানরা পারিবারিক পরিবেশে থাকুক।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ কথা বলে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়েসন্তানকে ফিরে পেতে ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো। ওই দিন রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট দুই শিশুকে হাজির করতে নির্দেশ দেয়।
আদালত বলে, বাবা-মা সন্তানদের নিয়ে একসঙ্গে থাকবেন তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। পরে আদালত দুই শিশুকে নিয়ে একই বাসায় থাকতে নির্দেশ দেয়।
আদেশের আগে আদালত দুই শিশুর বক্তব্য শোনে। এরপর বাবা ও মায়ের বক্তব্য শোনে।
সকালে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে দুই শিশুকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতে এ নিয়ে শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে মায়ের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় নিতে চান। সন্তানদের সঙ্গে রাতের বেলায় মা কাছে থাকতে চান। বাবা চাইলে গিয়ে দেখা করতে পারবেন। দুই সপ্তাহের জন্য মা তাদের সন্তানকে কাছে রাখতে চান।
অন্যদিকে বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ আদালতকে জানান, সন্তানদের সাপোর্ট সেন্টারে না রেখে বাবার জিম্মায় রাখতে আবেদন করেন তিনি। তবে মায়ের দাবির বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এমন একটি জায়গায় দিতে যেখানে বাবা-মা একসঙ্গে থাকবেন। তার কারণ দুই মেয়ে বাবার সঙ্গে থাকতে চায়। তাদের মানসিক সমস্যা হচ্ছে, এর থেকে উত্তরণের জন্য বাবাকে তাদের পাশে থাকা জরুরি।
সব পক্ষের কথা শুনে আদালত বাবা-মাকে গুলশানের একটি বাসায় থাকবে বলে আদেশ দেয়। সেখানে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তাকে দেখভাল করতে বলেছেন। একই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পুলিশ ও সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আদালতের এ আদেশের পর সন্তোষ জানিয়ে বাবা শরীফ ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সন্তানদের এখন আমি দেখতে পারব সেটাই আমার আনন্দ, আদেশে আমরা খুশি।’
স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে দুই মেয়েসন্তানকে ফিরে পেতে ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট দুই শিশুকে হাজির করতে নির্দেশ দেয়।
আদালতের নির্দেশের পরে গত ২২ আগস্ট দুই শিশুকে বাবা ইমরানের বারিধারার বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে আদালতের নির্দেশেই তাদেরকে উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়।
আজকের শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীই শিশু দুটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে ভিন্ন কোনো জায়গায় দিতে আদালতের কাছে আবেদন জানান।
আদালতে শিশু দুটির বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম। মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির।