বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আনরিয়েলাইজড গেইন: দায় ডিএসইকে দিল গ্রামীণ টু

  •    
  • ৩১ আগস্ট, ২০২১ ১৯:০১

কেন গ্রামীণ টু প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক হিসাবে আনরিয়েলাইজড গেইনের বিষয়টি উল্লেখ করল না- এমন প্রশ্নে ফান্ডটির ব্যবস্থাপনা করা এইমস বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী বলেন, তারা বিষয়টির উল্লেখ করেছেন। তবে ডিএসই সেটি আংশিক প্রকাশ করেছে। অবশ্য ডিএসইর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যেভাবে তাদের কাছে হিসাব আসে, সেভাবেই প্রকাশ করা হয়। এখানে অন্য কিছু হয়েছে কি না, সেটি পরে দেখে জানানো যাবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ড গ্রামীণ টুর প্রান্তিক হিসেবে ‘আনরিয়েলাইজড গেইন’ এর বিষয়টি উল্লেখ না করার দায় এর সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইম বাংলাদেশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে। তাদের দাবি, তারা প্রতি প্রান্তিকেই বিষয়টি উল্লেখ করেছিল। কিন্তু ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে সংক্ষিপ্ত আকারে হিসাব প্রকাশ হয়েছে।

এই ফান্ডটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত আয়ের ওপর যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে তারা উল্লেখ করেছে, এই সময়ে ইউনিটপ্রতি তাদের আয় ৬ টাকা ৮ পয়সা। তবে এর পুরোটা তারা হাতে পায়নি। শেয়ার বিক্রি করে বা নগদ লভ্যাংশ বা অন্য বিনিয়োগ থেকে আয়ের ১ টাকা ২১ পয়সা করে আয় হাতে এসেছে। এটাকে বলে রিয়েলাইজড গেইন। বাকি ৪ টাকা ৮৭ পয়সা তাদের আনরিয়েলাইজড গেইন। অর্থাৎ আয় হতে পারত যদি তারা ৩০ জুনের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করত।

কিন্তু লভ্যাংশ আসে রিয়েলাইজড গেইনের ওপর। ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত লভ্যাংশ পাননি।

ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩০ পয়সা লভ্যাংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে খুব একটা খারাপ, তা বলা যাবে না। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৩৯ পয়সা আয় দেখে আরও বেশি লভ্যাংশ পাওয়ার আশা ছিল বিনিয়োগকারীদের।

এর কারণ, চতুর্থ প্রান্তিকে সূচক বেড়েছে ৮৮০ পয়েন্ট। গ্রোথ ফান্ড হওয়ায় আয়ের যদি ৫০ শতাংশও লভ্যাংশ আসে, তাহলেও ইউনিটে আড়াই টাকা, আর যদি ৭০ শতাংশ আসে, তাহলে ৩ টাকার বেশি লভ্যাংশ আসবে-এমন প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা বেশি টাকা দিয়ে ইউনিট কিনেছেন। কিন্তু লভ্যাংশ ঘোষণার পর ধাক্কা খেল ইউনিটধারীরা।

গ্রামীণ টুর ব্যবস্থাপনা থাকা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইমস বাংলাদেশ জানায়, এই ফান্ডের আয়ের ৮০ শতাংশই আসলে আনরিয়েলাইজড।

লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত এই ট্রাস্টি বৈঠক হয়েছে গত রোববার। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। কেন গ্রামীণ টু এই বিষয়টি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক হিসাবে প্রকাশ করল না, সে প্রশ্ন করতে থাকেন তারা। পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক ফেসবুক পেজেগুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে।

সোমবার পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। ফলে লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার প্রভাব পড়ে মঙ্গলবার। এক দিনে ইউনিটপ্রতি দর হারায় ৩ টাকা বা ১৪.২৮ শতাংশ।

গ্রামীণ টুর লভ্যাংশের বিজ্ঞপ্তিতে আয়ের ৮০ শতাংশ আনরিয়েলাইজড গেইন হিসেবে দেখানো হয়

এমনিতে কোনো শেয়ার বা ইউনিটের মূল্য ১০ শতাংশের বেশি কমার সুযোগ না থাকলেও লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার পর লেনদেন বলে আজ দাম বাড়া-কমার কোনো প্রান্তসীমা ছিল না।

২১ টাকা থেকে ১৮ টাকায় নেমে আসা ইউনিটমূল্য এক পর্যায়ে নেমে এসেছিল ১৭ টাাক ৫০ পয়সায়। সেখান থেকে পরে ৫০ পয়সা বাড়ে।

একজন বিনিয়োগকারী হতাশা প্রকাশ করে লিখেন, তিনি ১৭ টাকা ৫০ পয়সা করে বিক্রি করে ২৪ হাজার ৮০০ টাকা লোকসান দিয়েছেন। গ্রামীণ টুর কর্তৃপক্ষ কেন এটা করল সেটা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।

এইমস যা বলছে

গ্রামীণ টুর ব্যবস্থাপনায় থাকা এইমস বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াওয়ার সাঈদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি প্রান্তিক ও সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আয় ডিএসই ও সিএসইতে প্রকাশ করা হয়। সেখানে আমাদের রিয়ালাইস ও আন রিয়ালাইস সব হিসাব যুক্ত থাকে।’

তাহলে কেন প্রান্তিক হিসাবে এটা প্রকাশ করা হয়নি?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা ডিএসইতে আমাদের সম্মিলিত আয়সহ দুই ধরনের আয়ই দিয়ে থাকি। কিন্ত ডিএসই থেকে শুধু একটি অংশ প্রকাশ করা হয়।’

অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা সব ইউনিটের বিপরীতে যদি লভ্যাংশ দিতে হয় তাহলে সব বিক্রি করে তারপর তা করতে হবে, যা কখনও যৌক্তিক হবে না। আমরা সে অনুযায়ীই করছি। এর সুফল বিনিয়োগকারীরা পান সব সময়। গত বছর যখন সব মিউচ্যুয়াল ফান্ড নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করল, তখন একমাত্র আমরা গ্রামীণ টুর ইউনিটধারীদের ৭ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছি।’

ডিএসইর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি

গ্রামীণ টুর প্রান্তিক হিসাবে আনরিয়েলাইজড গেইনের বিষয়টি উল্লেখ থাকলে কেন তা প্রকাশ করা হলো না, সে বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ-ডিএসইর কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে একজন উপমহাব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য পাঠালে তা সেভাবেই দেয়ার বিধান আছে। তবে চাইলে যে অংশটুকু প্রয়োজন সে অংশটুকুই দেয়া যায়। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বিধিনিষেধ নেই। গ্রামীণ টুর ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি দেখে বলতে হবে।’

গ্রামীণ টুর তিনটি প্রান্তিকের হিসাব, যাতে আয়ের সিংহভাগ যে আনরিয়েলাইজড গেইন, তার উল্লেখ নেই

মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রতি সপ্তাহের ও প্রান্তিক হিসাবের নোটিশ থাকে। কিন্তু লভ্যাংশ ঘোষণার পর গ্রামীণ টু পরিচালনা করা এইমসের ওয়েসবাইটে ঢোকা যাচ্ছে না। ক্লিক করলে ব্যান্ডউইথ লিমিট এক্সিড দেখাচ্ছে।

প্রান্তিক ঘোষণার পর ইউনিট মূল্য বেড়েছে যেভাবে

গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে গ্রামীণ টুর প্রান্তিক আয় প্রকাশ করা ছিল ৩ টাকা ৭ পয়সা। সে সময় ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ১৪ টাকা ১০ পয়সা।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয় আরও বাড়ে ৯৫ পয়সা। আর ভালো লভ্যাংশের আশায় বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি দামে ইউনিট কিনতে আগ্রহী ছিল বলে দাম বেড়ে হয় ১৬ টাকা ৮০ পয়সা।

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ইউনিটপ্রতি ১০ পয়সা লোকসান দেয়ার পর দাম খানিকটা কমে হয় ১৫ টাকা ৯০ পয়সা।

এরপর এপ্রিল থেকে পুঁজিবাজার ক্রমাগত উত্থানে থাকায় গ্রামীণের আয় আরও বাড়বে ভেবে আরও বেশি দামে ইউনিট কিনতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।

প্রান্তিক হিসাব দেয়ার পর ভালো লভ্যাংশের আশায় বেশি দামে ইউনিট কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা

৪ এপ্রিল ইউনিটপ্রতি দাম ছিল ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর সূচকের বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম বাড়তে থাকে গ্রামীণ টুর।

এর মধ্যে বিভিন্ন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ চলে আসতে থাকে। ফান্ডগুলোর সিংহভাগই এবার রেকর্ড পরিমাণ আয় করেছে। আর গত বছরের লোকসান সমন্বয় করেও বেশিরভাগ ফান্ডই লভ্যাংশ দিয়েছে রেকর্ড পরিমাণ।

এ জন্য গ্রামীণ টু নিয়ে আগ্রহ আরও বাড়ে। এর কারণ, আগের বছর তাদের কোনো লোকসান ছিল না। ফলে এবারের পুরো আয়ের ওপরই লভ্যাংশ আসবে-এই বিষয়টি ধরে নিয়ে তারা হিসাবনিকাশ করতে থাকে কী পরিমাণ লভ্যাংশ আসবে।

৪ এপ্রিল থেকে লভ্যাংশ ঘোষণার দুই দিন আগে গ্রামীণ টুর ইউনিটপ্রতি দাম বাড়ে ৬ টাকা ৫০ পয়সা বা ৪৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই সময়ে আর কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম এত বেশি বাড়েনি।

তবে লভ্যাংশ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি আসার পর হতাশ হয় বিনিয়োগকারীরা।

এ বিভাগের আরো খবর