করোনাভাইরাসের কারণে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজস্ব কমেছে ৬৬ শতাংশ। অবিক্রীত রয়ে গেছে ৭৬ শতাংশ পণ্য। এই খাতের ৪২ শতাংশ কর্মী আংশিক বেতন পেয়েছেন, ৪ শতাংশ কর্মী বেতনই পাননি। এমন পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের ক্ষতি কাটাতে এই খাতের জন্য আরও অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা দরকার বলে জানানো হয়েছে এক প্রতিবেদনে।
ভার্চুয়াল এক আলোচনা সভায় মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘করোনা সংকটের পর এসএমই খাতের ভবিষ্যত: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এফইএস বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে প্রতিবেদনটি তৈরি করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।
প্রতিবেদনটির নানা দিক তুলে ধরে আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ ভাগ। এই খাতের অবকাঠামো ও ক্লাস্টার উন্নয়নে এসএমই নীতিমালা ২০১৯ সরকারের একটি কার্যকর উদ্যোগ। সেই সঙ্গে এসএমই পণ্যের বাজার সংযোগের দিকেও নজর দেয়া হয়েছে এই নীতিমালায়।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ভারত এসএমই খাতের জন্য মোট প্রণোদনা প্যাকেজের ৩৮ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৩৩ শতাংশ, মালয়েশিয়া ২৪ শতাংশ বরাদ্দ করলেও বাংলাদেশে বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ২২ শতাংশ।
এসএমই খাতের জন্য সরকারের প্রণোদনার পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আতিউর রহমান বলেন, সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরও অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন।
এ সময় আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) তহবিলের বেশির ভাগ অর্থই উন্নত দেশগুলো নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর এসএমই খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এসএমই খাতে বিশেষ নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিবেদনে ৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন আতিউর রহমান।
সুপারিশগুলো হলো:
০১. এসএমই নীতিমালা ২০১৯ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন
০২. ক্লাস্টারভিত্তিক এসএমই উন্নয়ন
০৩. এসএমই ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসএমই প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ
০৪. প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ নজরদারির জন্য ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড তৈরি
০৫. ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ তৈরি এবং ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের উন্নয়ন।
০৬. রপ্তানিমুখী এসএমই এবং নারী-উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেয়া।
০৭. পরিবেশবান্ধব এসএমই প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়া।
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল আলোচকও ছিলেন আতিউর রহমান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী এবং ইউএনডিপির কান্ট্রি অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এসএমই বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত। কোভিড-১৯-এর কারণে এই খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ইতিমধ্যে এসএমই খাতকে প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতিসহায়তা দিয়েছে।
সেই ধারাবাহিকতায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় গত অর্থবছরের ১০০ কোটি টাকার মতো চলতি অর্থবছরেও ২০০ কোটি টাকা বিতরণে এসএমই ফাউন্ডেশন সক্ষম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রণোদনার অংশ হিসেবে ৯৫ হাজার এসএমই উদ্যোক্তার মাঝে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান অনুসারেই দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৮ লাখের বেশি। তাই দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এসএমই খাতের উন্নয়নে কাঠামোগত ও নীতি সংস্কার করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।