নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া আগুনের ঘটনাকে ‘কাঠামোগত হত্যা’ বলেছে নাগরিক কমিটি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপের্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে মঙ্গলবার এ ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে নাগরিক কমিটি।
প্রতিবেদনে ঘটনার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং কারখানার মালিকপক্ষকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ রেখেছে নাগরিক কমিটি।
কারখানার আগুনে ব্যাপক প্রাণহানির পর গত ৮ জুলাই ১৯ সদস্যের ‘নাগরিক তদন্ত কমিটি’ হয়। কমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
নাগরিক কমিটি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে নিহত শ্রমিকদের পরিবার, আহত শ্রমিক, কারখানার কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তরসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার ও তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর হয় পর্যালোচনা।
নাগরিক কমিটি জানায়, সরকারিভাবে ৫২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলেও, তারা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য যাচাইয়ে নিহতের সংখ্যা ৫৪ জন পেয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৩৩ জন।
তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা ৫৪ জন মারা গেছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। তথ্য যাচাইয়ে আমরা চরফ্যাশন পর্যন্ত গিয়েছি।’
কমিটির আহ্বায়ক জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘সরকারি সব প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা হতো না। দায়িত্ব অবহেলার মাধ্যমে এটি কাঠামোগত হত্যা। ভবনটিতে ফায়ার অ্যালার্ম ছিল না, ফলে আগুন লাগার পর কেউ টের পায়নি। ভবনটিতে আগুনরোধী সিঁড়ি ছিল না।
‘ফায়ার সেফটি সনদ নিলেও কারখানায় পরিকল্পনা অনুযায়ী সিঁড়ি তৈরি হয়নি। সিঁড়ি না থাকার কারণে মৃত্যু বেড়েছে। ভবনটিতে আগুন লাগার সহায়ক সব ধরনের উপকরণ ছিল। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণ ও জীবন বাঁচানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না।’
হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় আগুনে অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ মিলনায়তনে মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে নাগরিক কমিটি। ছবি: নিউজবাংলা
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্ব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এসব দায়িত্ব পালন করেনি। এ ছাড়া কারখানাটিতে শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
কমিটির সদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, ‘কিশোরদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এড়ানোর কথা শ্রম আইনে আছে, ওই কারখানায় তা মানা হয়নি। নারীদের ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা সেখানে ছিল না।’
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১০টি সুপারিশ করেছে নাগরিক কমিটি। তার মধ্যে রয়েছে কারখানায় শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি, নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। এছাড়া কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো।
গত ৮ জুলাই রাতে হাশেম ফুড লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। শুরুতে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও পরের দিন উদ্ধার করা হয় ৪৯ জনের মরদেহ। মোট মৃতের সংখ্যা ৫২ জন।