সমকামীদের অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়ের খুনিরা বেঁচে থাকলে অন্যরাও একই ধরনের কাজে উৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া বিচারক। বলেছেন, ‘আসামিরা কোনো সহানুভূতি পেতে পারে না।’
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে আলোচিত এ মামলার রায় দেন। এতে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক জিয়া মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরীয়ার, মো. আরাফাত রহমান সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস, মো. শেখ আব্দুল্লাহ জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের, আসাদুল্লাহ ফয়জুল ওরফে ফয়সাল ওরফে ফকরুল ওরফে জাকির ওরফে সাদিক ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আব্দুল্লাহকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে মেজর জিয়া ও আকরাম হোসেন পলাতক। বাকি চার আসামি ছিলেন আদালতে।
আসামিরা কতটা বেপরোয়া তা রায়ের পরই বোঝা গেছে। নানা সময় দেখা গেছে, মৃত্যুদণ্ডের আদেশ এলে আসামিরা ভেঙে পড়েন, কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করেন। কিন্তু এই আসামিরা ছিলেন হাসিমুখে। খুন করেও কোনো অনুশোচনা ছিল না তাদের মধ্যে।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘সাক্ষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় আসামিরা সবাই নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা সমকামীদের নিয়ে র্যালি করাসহ সমকামীদের সমাজে প্রতিষ্ঠার দায়ে জুলহাজ মান্নান ও খন্দকার মাহবুব রাব্বী তন্ময় ওরফে তনয়কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।’
তিনি বলেন, ‘মূল হত্যাকারীসহ মামলার অভিযুক্ত আসামিদের অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। তারা জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে মতামত প্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার জন্য এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।’
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘হত্যায় অংশগ্রহণকারী অভিযুক্ত আসামিরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহিত হবে। কাজেই এসব আসামি কোনো সহানুভূতি পেতে পারে না।
‘ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এতে নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়রা শান্তি পাবেন। অন্যদিকে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে ভয় পাবে এবং নিরুৎসাহিত হবে।’
আলোচিত এ মামলায় গত ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ঠিক করে আদালত। মোট ২৭ কার্যদিবসে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করে মঙ্গলবার এ রায় প্রদান করা হয়।
রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডে ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল খুনের শিকার হন ইউএসএইড কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়।