সাভারে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুবলীগের আয়োজিত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে ত্রাণ না দিয়ে কেবল ছবি তুলে প্রতিবন্ধীদের ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকে চলছে সমালোচনা।
তবে, ঢাকা জেলা যুবলীগের দাবি, অভিযোগ সত্য নয়। ত্রাণ দেয়ার সময় হুড়োহুড়িতে কেবল তিন জন বাদ পড়েছে। তাদের বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে সাভার কলেজ মাঠে।
সেখানে ঢাকা জেলা যুবলীগ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শোকসভা ও ত্রাণ বিতরণের আয়োজন করে। ত্রাণ সংগ্রহের জন্য আগেই ১০০০ দুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের কার্ড দেয়া হয়।
অনুষ্ঠান শেষে জহুরা ও জয়নাল নামের দুই জন সেখানে উপস্থিত কিছু সংবাদমাধ্যমকর্মীর কাছে অভিযোগ করেন, কার্ড নিয়ে এসেও তারা ত্রাণ পাননি। ছবি তুলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএস মিজান সোমবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার সময়ে আমি সারা বছর অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি। আজ (সোমবার) কেন্দ্রীয় যুবলীগের উদ্যোগে হাজার মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আগে থেকেই আমার বিভিন্ন এলাকার প্রতিবন্ধী ও দুস্থদের কার্ড দিয়েছিলাম। যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়।
‘অনুষ্ঠানের পরে জানতে পারি কয়েকজন মানুষ ত্রাণ পায়নি। পরে নিশ্চিত হই মোট তিনজন ত্রাণ পায় নাই। আর যে তিনজন ত্রাণ পাননি তারা সবাই আমার বাসার পাশেই থাকেন। এদের মধ্যে জয়নাল ও বৃষ্টিকে আমি চিনি। জয়নাল আগে আমার বাসায় কাজ করত। এখন প্যারালাইজড হয়ে অসুস্থ।’
সোমবার সন্ধ্যায় সাভার পৌর এলাকায় মো. জয়নাল, জহুরা বেগম ও বৃষ্টি বেগম নামের আরেকজনের বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দেন মিজান।
ত্রাণ পেয়ে জয়নাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাগো তো মনে করেন, ধাক্কা দিয়া ফালায় দিছে। ফালায় দেয়ার পরে আমি তো ঠাস কইরা পইরা গেছি। আমার মাথাটা চক্কর দিছে। আবোর সারা দিন না খাওয়া। নেতারা তখন বলছে, তোমারডা আছে। তুমি বাসায় চইলা যাও। আমি তখন বুঝতে পারি নাই, অসুস্থ তো।
‘আমারটা পরে আলাদা কইরা রাইখা দিছিল। আমি, জহুরাসহ তিনজন আছিলাম। আরেকজনের নাম আমি কইতে পারি না। পরে সন্ধ্যায় নেতা আমারটা বাসায় দিয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিজান নেতার বাসায় আমি আগে কাজ করতাম। উনি আগেও আমাগো বেশ কয়েকবার দিছে।’
বৃষ্টি বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তখন ভিড় হইয়া গেছিল দেইখা পাই নাই। বাসায় বাচ্চা থুইয়া আইছিলাম দেইখা দেরি হওয়ায় আবার চইলা গেছিলাম। পরে দেড়টার দিকে আবার গেছি। তখন ত্রাণ দেওয়া শ্যাষ। তখন আমি কিছু কই নাই। জহুরা কইছে উনি তো প্রতিবন্ধী। পরে আমারটা নেতার লোকজন আইসা বাসায় দিয়া গেছে। জহুরাটারও দিয়া আসছে। নেতায় তো (জিএস মিজান) সব সময় দেয় আমাগো।’
প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদকর্মী ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হুড়াহুড়ির কারণেই সমস্যা হয়েছে। কারটা কে নিয়া গেছে ঠিক পায় নাই।’
উপস্থিত নেছার উদ্দিন নামে আরেক সংবাদকর্মী বলেন, ‘ত্রাণ দেয়ার সময় আমি ওখানেই ছিলাম। তখন ছবি তোলা নিয়া অনেক হুড়োহুড়ি হয়েছে। ওই সময় তিনজন ত্রাণ পায় নাই।’
ত্রাণের প্যাকেজে ছিল ৫ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, তেল ১ লিটার, ডাল ১ কেজি, পেঁয়াজ ২ কেজি ও আধা কেজি লবণ।
অনুষ্ঠানে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান, ঢাকা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএস মিজানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।