সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের জন্য এই দফায় নির্বাচন কমিশন থেকে প্রচারের সুযোগ দেয়া হয়েছে মাত্র একদিন। তবে, কোনো প্রার্থীই মানছেন না এই নির্দেশনা। বরং শাটডাউন উঠে যাওয়ার পর থেকেই প্রচারে নেমেছেন তারা।
প্রচার আরও জোড়ালো হয়েছে ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণার পর। শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে মাঠে নেমেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলীয় প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকের পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে সোমবারই সিলেট এসেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তার নেতৃত্বে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা সিলেটে অবস্থান করছেন। আতিকের পক্ষে মঙ্গলবার গণসংযোগ করবেন তারা। একইদিন বিকেলে এই উপনির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও ডেকেছেন বাবলু।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে প্রচার চালাতে বুধবার সিলেট আসবেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও এস.এম কামাল হোসেন। বুধবার ও বৃহস্পতিবার হাবিবের পক্ষে নির্বাচনী জনসভা ও গণসংযোগে অংশ নেবেন তারা।
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও বুধবার সিলেট আসছেন। ১ ও ২ সেপ্টেম্বর বালাগঞ্জ সদর, ফেঞ্চুগঞ্জ থানা রোড ও দক্ষিণ সুরমার জালালপুরে শেষ নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তারা।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হওয়া সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন আগামী ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চার প্রার্থী।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব দলটির জেলা কমিটির সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। মোটর গাড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াইয়ে আছেন বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী এবং ডাব প্রতীক নিয়ে আছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া।
শুরু থেকেই তেমন কোনো প্রচারে নেই জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া। অন্য তিন প্রার্থী প্রতিদিনই পথসভা, জনসংযোগ, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন।
বিএনপির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় শফি চৌধুরীকে থেকে বহিষ্কার করে দল। তাই প্রচারে তার পাশে নেই দলীয় নেতাকর্মীরাও। একাই নিজের প্রচার চালাচ্ছেন প্রবীন এই নেতা।
গত ২৮ জুলাই এই উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোটের ঠিক দুদিন আগে নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।
এরপর গত ২৩ আগস্ট উপনির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন বলে, যেহেতু ভোটের মাত্র দুই দিন আগে এটি বন্ধ করা হয়েছিল, তাই ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনই প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচার চালাতে পারবেন।
তবে, প্রার্থীরা নতুন কৌশলে প্রতিদিনই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
আগস্ট মাসজুড়ে শোকসভার নামে প্রচার চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। সিলেট-৩ আসনের তিন উপজেলায় এসব শোকসভায় দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হয়ে হাবিবের পক্ষে ভোট চেয়েছেন।
দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জে গত ২২ আগস্ট শোকসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। এতে অংশ নেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ ডন।
শোকসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের হাবিবকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ করার হানিফ। এই নির্বাচনি এলাকায় আরও কয়েকটি শোকসভায় উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারাও হাবিবের পক্ষে প্রচার চালান।
এতোদিন কেবল তৃণমূলের কর্মী নিয়ে আতিকুর রহমান আতিক প্রচার চালালেও শেষ মূহূর্তে এসে তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আতিকের পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে সোমবার জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে সিলেট আসেন এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় নেতা।
দক্ষিণ সুরমায় সোমবার জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের স্মরণ সভার আয়োজন করে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টি। স্মরণসভা বলা হলেও এতে আতিকের নির্বাচনি প্রচারই চালান অতিথিরা। সবার বক্তব্যেই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করানোর বিষয়টি উঠে আসে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, উপনির্বাচনে আতিককে সিলেটবাসী বিজয়ী করলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের আত্মা শান্তি পাবে। সিলেটের উন্নয়নের জন্য আতিক তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে।
লাঙ্গল বিজয়ী হলে গণতন্ত্রের জয় হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পেশীশক্তি দিয়ে বল প্রয়োগ করে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যায় না। জিততে হলে জনগণের ভালবাসা আদায় করে নিতে হয়। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিক জনগণের ভালবাসায় এগিয়ে যাচ্ছেন। ষড়যন্ত্র করে আতিকের বিজয় কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’
একদিন প্রচারের সুযোগ সত্ত্বেও টানা প্রচার চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো প্রচার চালাচ্ছে না। শোকের মাস আগস্টে আমরা নির্বাচনি প্রচারে নেই। বরং শোক সভা করেছি। তবে, আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচনমূখী দল ও সরকারে আছে তাই প্রাসঙ্গিকভাবেই সরকারের উন্নয়ন, ভোটের প্রসঙ্গে শোকসভায়ও আলোচনা হয়েছে।’
হাবিব অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি প্রচার বন্ধ রাখলেও আতিকুর রহমান আতিক নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিদিনই নির্বাচনি প্রচার-গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।’
জবাবে আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘হাবিব শাটডাউন চলাকালেও নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও অভিযোগ জানিয়েছি। তখন আমি কোনো প্রচার চালাইনি। কিন্তু আমি যেহেতু প্রার্থী তাই কোথাও গেলেই মানুষজন ভোটের প্রসঙ্গে আলাপ তুলে। অনেকে জড়ো হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারের জন্য নয় বরং দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনার দিতেই সিলেট এসেছেন। নির্বাচনি পরিবেশ ও শঙ্কার বিষয়টি তারা সাংবাদিকদের কাছেও তুলে ধরবেন।’
সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজিনা আক্তার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রার্থীরা এখন প্রচার চালাতে পারবেন না। কেবল কাল প্রচার চালাবেন। আমরা শুনেছি প্রাথীরা এখন প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেবো।’
করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১১ মার্চ সিলেট-৩-আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। করোনার কারণে কয়েকদফা পিছিয়ে যায় এই আসনের উপনির্বাচন।