করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওপর। উত্তরাঞ্চল ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক রোগী ছুটে যান সেখানে। করোনা রোগীর বাড়তি চাপ সামলাতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
বাড়তি এ চাপের মধ্যেও হাসপাতালের প্রাপ্তি কম নয়। করোনা রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক কিছুই নতুন করে সাজাতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতালের যত উন্নয়ন
রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত চার মাসে করোনা সেবায় এখানে ৬১৩টি বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন দেয়া হয়েছে। আরও ৩০০ বেডে অক্সিজেন লাইন যুক্ত করার কাজ চলছে। অক্সিজেন প্লান্ট একটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুটিতে। আইসিইউ ১০টি থেকে হয়েছে ৩০টি।
সীমাবদ্ধতা দূর করতে গিয়ে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে হাসপাতালে। করোনা পরবর্তী সময়েও এসব যন্ত্রপাতি রোগীর সেবায় বিশেষভাবে কাজে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি হাসপাতালে তৈরি করা হয়েছে নতুন প্যাথলজি বিভাগ। বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য রোগীদের আর বাইরে বা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হবে না। এখানে মিলছে সব পরীক্ষার সুযোগ। সেটাও আবার কম মূল্যে।
চলছে প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম। ছবি: নিউজবাংলা
আগে আইসিইউয়ের একটি টেস্ট করার জন্য রোগীদের ছুটতে হতো বাইরে। এখন আইসিইউতেই এই সুবিধা দেয়া হচ্ছে। মূলত করোনার সময়ে হাসপাতালে যেসব সিস্টেমের উন্নতি হয়েছে আগামী দিনগুলোতেও সেগুলো কাজে আসবে।
রাজশাহীর উন্নয়নকর্মী সুব্রত পাল বলেন, ‘রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক আগে থেকেই এখানকার সচেতন মানুষ আবেদন বা দাবি জানিয়ে আসছিল।
‘যেভাবেই হোক করোনাকে সামনে রেখে হলেও শেষ র্পযন্ত এখানে আইসিইউতে বেড বেড়েছে। এটা অবশ্যই ভালো খবর। এ জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’
ট্রলিতে করে রোগীকে জরুরি বিভাগে নিচ্ছেন স্বজনরা। ছবি: নিউজবাংলা
কর্তৃপক্ষ যা বলছে
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে করোনা সংক্রমণ কিছুটা নিম্ন। একের পর এক করোনা ওয়ার্ড ফিরে যাচ্ছে সাধারণ চিকিৎসায়।
‘হাসপাতালের সক্ষমতার বৃদ্ধির কারণে উন্নত ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা পবেন এখানকার রোগীরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার কিছু যন্ত্রাংশ করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার হলেও পরে এগুলো সাধারণ চিকিৎসায় কাজে লাগবে।’
বিশেষায়িত করোনা ওয়ার্ড ফিরে যাচ্ছে সাধারণ ওয়ার্ডে। ছবি: নিউজবাংলা
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘করোনার ঊর্ধ্বগতির পর থেকে আমাদের এখানে অনেক চিকিৎসাসামগ্রী আনা হয়েছে। নতুন করে অনেক প্রয়োজনীয় মেশিন কেনা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ সক্ষমতা বেড়েছে।
‘আমরা নতুন করে ২০টি আইসিইউ পেয়েছি। বর্তমানে ৩০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এর মধ্যে করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহার হচ্ছে ২০টি। করোনা কমে আসলে এগুলো সাধারণ চিকিৎসায় ব্যবহার হবে। এখানে আইসিইউয়ের প্রচণ্ড চাহিদা রয়েছে।’
করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগী। ছবি: নিউজবাংলা
হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, ‘এখানে আগে সিলিন্ডার দিয়েই রোগীর অক্সিজেনের চাহিদা মেটানো হতো। চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও এখানে মাত্র ৬৫টি বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন যুক্ত ছিল। কিন্তু করোনায় পরিস্থিতি অবনতির পর অক্সিজেন সেবা জরুরি হয়ে পড়ায় এখানকার একের পর এক বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোগ দেয়া শুরু হয়।
‘বর্তমানে এখানে ৬১৩টি বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন দেয়া হয়েছে। আরও ৩০০ বেডে অক্সিজেন লাইনযুক্ত করার কাজ চলছে। এখানে আগে অক্সিজেন প্লান্ট ছিল একটি। এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুইটিতে।’
পরিচালক শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালে বায়োপ্যাক রয়েছে ২২টি। এগুলো পরে নিউমোনিয়ার রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া আমাদের পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন কেনা হয়েছে। সেগুলো হাড় জোড়সহ প্রায় সব বিভাগেই ব্যবহার করা যাবে।