রাজধানীর কলাবাগানে ঘরে ঢুকে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমানকে হত্যার তিন মাসেও কোনো কূলকিনারাই করতে পারল না পুলিশ।
থানা পুলিশের ব্যর্থতার পর তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে বাহিনীটির বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই। তারা দায়িত্ব পেয়েছে এক সপ্তাহ নাগাদ। এখনও কিছু গুছিয়ে উঠতে পারেনি।
গত ৩১ মে সকালে কলাবাগান ফার্স্ট লেনের ৫০/১ নং বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে গ্রিনলাইফ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক সাবিরা রহমানের রক্তমাখা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তার কক্ষে ঢুকে খুন করা হয়েছে বেশ নিখুঁতভাবে। পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের বড় ক্ষত ছিল কাঁধ ও ঘাড়ের মাঝামাঝি জায়গায়। পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সে আগুনে পুড়ে যায় দেহের অনেকখানি।
কিন্তু খুনি কোনো আলামত রেখে যায়নি। তদন্ত এগিয়ে নেয়া যায়, এমন একটি ক্লুও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
সেই কক্ষে ডা. সাবিরা থাকতেন একা। তিন কক্ষের ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীকে। এদের একজন ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে আর ফেরেননি তখনও। অন্যজন একজন মডেল, যিনি ভোরে জগিংয়ের জন্য বের হন।
সেই বাড়িতে একজন দারোয়ান ছিলেন, কিন্তু কারা নিচ থেকে উঠেছেন, খুন করে চলে গেছেন, তিনি দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
সেই বাড়িতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। আর ডা. সাবিরার কক্ষে কারও আঙুলের ছাপও পাননি তদন্ত কর্মকর্তারা।
শুরু থেকেই ঘুরপাক খাওয়া তদন্ত কর্মকর্তারা একে ‘একটি নিখুঁত খুন’ হিসেবেই দেখছিলেন। তারপরও আশা করছিলেন, হয়তো কোনো না কোনো একটি উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে, যে পথ ধরে এগিয়ে খুনিকে শনাক্ত করা যাবে।
কিন্তু সেটি আর হয়নি। সেই বাসায় সাবলেটে ভাড়া থাকা নারী মডেলের কাছ থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আর তাকে সন্দেহ করার মতোও কোনো উপাদান পায়নি পুলিশ, পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের নিউ মার্কেট জোনের উপকমিশনার শরীফ মাহমুদ ফারুকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি মাস থেকে কাগজে-কলমে পিবিআই কাজ করছে। আমাদের কাছে এই মামলার কোনো আপডেট নাই। আমরা যে তদন্ত করেছি, তার কাগজপত্র, ডকুমেন্ট ও মামলার পুরা ডকেট আমরা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি।
‘আমরা অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। সাক্ষাৎকারের লিখিত রূপ, আমাদের কাছে জব্দ আলামত, মেডিক্যাল রিপোর্ট সবকিছুই পিবিআইকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এটা নিয়ে পিবিআইয়ের দুইটা টিম কাজ করছে।’
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক জুয়েল মিয়া বলেন, ‘চলতি মাসের ২২ তারিখে মামলাটি আমরা হাতে পেয়েছি। ডকেট পর্যালোচনা করছি। ফরেনসিকের কোন কোন রিপোর্টগুলো আসল, সেগুলো দেখছি। এই মামলার আপডেট তদন্তের পর জানাতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই আমরা ছায়া তদন্ত চালাচ্ছিলাম। এখন যেহেতু তদন্ত আমাদের হাতে, সেহেতু আরও জোরালোভাবে তদন্ত করছি।’
তিনি বলেন, ‘ডা. সাবিরার বাসায় সাবলেটে থাকা ওই নারী মডেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছিলাম আমরা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে আমরা তাকে ডাকি। ডিবি পুলিশসহ সবাই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনি আগের বাসা পরিবর্তন করে নতুন বাসায় উঠেছেন।’
ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক শেখ রাসেল কবির বলেছিলেন, ‘যেটা বোঝা যাচ্ছে সাবিরাকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা হত্যা করা হয়েছে। তার ঘাড়ে ও পিঠে ক্ষতের দাগ পাওয়া গেছে। ঘাড়ের নিচে গভীর ক্ষতের দাগ আছে। তাকে মার্ডার করার পরই শরীরে আগুন লাগানো হয়েছে। আগুন লাগার কোনো আলামত আমরা পাইনি। আগুনটা লাগানো হয়েছে তার শরীরে।’
সাবিরা ফ্ল্যাটটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি বিবাহিত, তবে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। তিনি অন্য জায়গায় ভাড়া থাকতেন।
সাবিরার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তারা মাকে খুনের দিন পাশেই নানির বাসায় ছিলেন।