ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারের নামে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসক পীযূষ কান্তি হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের কর্মরত।
তার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জের আটিপাড়ার চার বছরের শিশু নাফিজা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার ১০ বছরের শিশু তানিয়া আক্তার, কিশোরগঞ্জের গজনবীর আমজাদ হোসেনসহ একাধিক রোগীর স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন।
কেরানীগঞ্জের নাজিফা আক্তারের বাবা খোরশেদ আলম জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে বাসার ছাদে খেলার সময় নিচে পড়ে যায় তার মেয়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
সোমবার নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা তার সিটিস্ক্যান করতে বলেন। সিটিস্ক্যানের প্রতিবেদন দেখার পর তাকে ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রাত ৮টার দিকে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হবে বলে জানান চিকিৎসকরা।
অপারেশনের আগে নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক পীযূষ কান্তি তাদের জানান, অপারেশন করতে একটি যন্ত্র প্রয়োজন, যা হাসপাতালে নেই। ওই যন্ত্রের জন্য প্রায় ১০ হাজার টাকা লাগবে।
খোরশেদ আরও জানান, চিকিৎসকের কথা শুনে তিনি ভাইকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেন। পরে কথা বলে ২ হাজার টাকা কমিয়ে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ জন্য তাকে একটি ভাউচারও দেয়া হয়।
পরে তিনি জানতে পারেন, ঢাকা মেডিক্যালে অস্ত্রোপচারের জন্য কোনো টাকা লাগে না। সব যন্ত্রই এখানে আছে।
চিকিৎসককে পিযূষকে এরপর ফোন করলে তিনি টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। ভাউচারের বিষয়টিও অস্বীকার করেন।
গজনবী নামে আরেক রোগীর ভাতিজা জুয়েল অভিযোগ করেন, তার চাচার মাথার অপারেশনের জন্য যন্ত্র কেনার নামে ১০ হাজার টাকা নেন পিযূষ।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা শিশু তানিয়ার অপারেশনের জন্য ৪০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছেন তার বাবা।
কিশোরগঞ্জ ইটনা থেকে আমজাদ হোসেনের স্বজনদের কাছ থেকেও ১০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী মোশারফ হোসেন জানান, তার ভাইকে ২ তারিখ ঢাকা মেডিক্যালের ২০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ওই দিন রাতেই তার মাথার অপারেশনের জন্য ১০ হাজার টাকা নেয়া হয়। তবে ১৩ তারিখ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার ভাই।
তিনি বলেন, ‘এই চিকিৎসকের ব্যবহার ভালো না। আমার ভাইকে আইসিইউয়ের জন্য অনেক চাপ দিয়েছিল। আমরা টাকার অভাবে আইসিইউতে পাঠাইতে পারিনি। পরে তিনি বলেন, ধানমন্ডিতে আমার একটি পরিচিত হাসপাতালে আইসিইউ আছে, তোমরা যেতে পার। এর মধ্যেই আমার ভাই তো ভাই মারা গেল।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র বলেন, ‘এক চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সমস্যা হয়েছে। এই বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। বিস্তারিত না জেনে আমি কিছু বলতে পারব না, বিস্তারিত জেনে জানানো হবে।’
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন ঘটনা আগেও শুনেছি। আজকে অফিস বন্ধ থাকায় আগামীকাল অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখব।
‘অভিযোগকারীরা লিখিত দিলে যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’