বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শ্রীলঙ্কাকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়

  •    
  • ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:৪৮

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর শ্রীলঙ্কাকে দেয়া হবে মোট ২৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এ অর্থ দেয়া হচ্ছে। সোমবার শ্রীলঙ্কার অনুকূলে ১০ কোটি ডলার ছাড়ের পর রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে।

বিদেশি মুদ্রার সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কাকে প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ১০ কোটি ডলার ছাড় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান বাজারদরে টাকার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ২০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ৮৫২ কোটি টাকা।

সোমবার মুদ্রা বিনিময়ের (কারেন্সি সোয়াপ) আওতায় শ্রীলঙ্কাকে এই ঋণ ছাড় করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।

গত ১৮ আগস্ট প্রথম কিস্তির ৫ কোটি ডলার ছাড় করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই ঋণ ছাড়ের মাধ্যমে ঋণদাতা দেশের তালিকায় নাম লেখায় বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের উন্নয়নে বা নানা প্রয়োজন মেটাতে ঋণ করা বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ঋণ দিচ্ছে কোনো দেশকে।

গত এক যুগে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধিতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীত হওয়ায় ঋণ দেয়ার এই সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর শ্রীলঙ্কাকে দেয়া হবে মোট ২৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এ অর্থ দেয়া হচ্ছে। সোমবার শ্রীলঙ্কার অনুকূলে ১০ কোটি ডলার ছাড়ের পর রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে।

গত মে মাসে মুদ্রা বিনিময়ের (কারেন্সি সোয়াপ) আওতায় শ্রীলঙ্কাকে এই ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার চাহিদার ভিত্তিতে প্রথম কিস্তির ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছিল ১৮ আগস্ট। সোমবার ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার ছাড় করা হয়েছে। প্রতিশ্রুত ঋণের বাকি অংশ দেশটির চাহিদা বিবেচনায় ছাড় করা হবে।’

শ্রীলঙ্কার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাদের ঋণ দেয়ার নীতিগত অনুমোদন হয়। এরপর চুক্তিনামা তৈরিসহ কিছু প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগল।

দেশের মধ্যেও এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের সঙ্গে সোয়াপ করে। সাধারণভাবে টাকা ও ডলারের সোয়াপ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সাময়িক সংকটে পড়লে টাকা রেখে স্বল্প সময়ের জন্য ডলার নেয়। ওই ব্যাংকের হাতে ডলার এলে নির্ধারিত সুদসহ আবার তা পরিশোধ করতে হয়। তখন জমা টাকা ফেরত পায় ব্যাংকটি।

যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কম তারা বিপদে পড়লে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। তবে শ্রীলঙ্কার এই মুহূর্তে সেটি নেই।

সুদ কত

সমঝোতা অনুযায়ী এই ধারের জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে লাইবরের (লন্ডন আন্তব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করবে।

তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য দিতে হবে লাইবরের সঙ্গে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ সুদ।

লাইবর হলো যুক্তরাজ্যের লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট। বর্তমানে লাইবর রেট ২ শতাংশের কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগের বিপরীতে গ্যারান্টি দেবে শ্রীলঙ্কার সরকার ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ২৫ কোটি ডলার সমমূল্যের শ্রীলঙ্কান রুপি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লিয়েন হিসেবে জমা থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করবে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কা।

প্রস্তাব মুজিব শতবর্ষে

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত মার্চে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও ঢাকায় এসেছিলেন। ওই সময়ে তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রস্তাব দেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা রাজি হওয়ার পরে শ্রীলঙ্কার সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায়।

শ্রীলঙ্কা সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-সংকটে ভুগছে। সোমবার দেশটির রিজার্ভ ছিল ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে তাদের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশও আগে নিয়েছে এই ঋণ

বাংলাদেশ ২০০১ সালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়লে দেশের রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে যায়। তখন বাংলাদেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। তখন আকুর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রথম সোয়াপ করে।

আকুর সদস্য দেশগুলো বাকিতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালায়। প্রতি দুই মাস পর পর দেনা-পাওনা সমন্বয় করে।

বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে ৮ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

বর্তমানে ভারতের রিজার্ভের পরিমাণ ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। বাংলাদেশের ৪৮ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার। আর নেপালের রিজার্ভ উন্নীত হয়েছিল ১১ বিলিয়ন ডলারে মতো।

শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০১৮ সালের এপ্রিলে। সে সময় দেশটির রিজার্ভ ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার। তবে করোনাকালে সেটি প্রায় অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।

এ বিভাগের আরো খবর