জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ৫৫তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা।
মঙ্গলবার এই সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এরপর তা ৬ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। এরই মধ্যে নীতিমালাটি ডিনস কমিটির সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলার প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি যে, আমাদের সরাসরি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষেই মতামত ছিল। দেশের করোনা পরিস্থিতি অবনতি হলে তো সরাসরি পরীক্ষা নেয়া যাবে না। সেজন্য যদি সরাসরি পরীক্ষা না নেয়া যায় তাহলে আমরা অনলাইনে পরীক্ষা নিব। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা নিতে হলে তো একটি নীতিমালা লাগবে। কীভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে, কারা এর দায়িত্বে থাকবে। পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তুতি আছে কি না, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দরকার আছে কি না এসব বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।’
নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক শিক্ষক আছেন যারা হয়তো এগুলো চর্চাই করতে পারেন না। আবার অনেক শিক্ষার্থীও জানেন না কীভাবে সঠিকভাবে উত্তরপত্র জমা দিতে হয়। সেজন্য একাডেমিক কাউন্সিলে নীতিমালাটা চূড়ান্ত হওয়া জরুরি।’
‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) একাডেমিক কাউন্সিলে অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা পাস হবে। এখন যেহেতু সরকারও চায় ব্লেন্ডেড শিক্ষাব্যবস্থা অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও অনলাইন ও সশরীর দুইভাবেই শিক্ষা-কার্যক্রম চলবে, আমরা সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা চাইলেই পরীক্ষা নেয়া হবে। অনলাইনে হোক কিংবা সশরীরে হোক পরীক্ষার আগে চার সপ্তাহ সময় দেয়া হবে। আমরা নীতিমালা তৈরি করছি শিক্ষার্থীদের জন্যই, যাতে করে শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়াগুলো পূরণ করতে পারি।’
‘নীতিমালা পাস হওয়ার পর যদি পরবর্তীকালে সরকারের সিদ্ধান্ত আসে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে তাহলে তো আমরা সরাসরি পরীক্ষা নিতে পারব।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘নীতিমালা প্রস্তুত করে রাখছি যদি শিক্ষার্থীরা বলে আমরা পরীক্ষা দিবো, তাহলে কমপক্ষে চার সপ্তাহ সময় দিয়ে আমরা পরীক্ষার সময়সূচি দিয়ে দিবো।’
‘করোনার মতো মহামারি যে আবার আসবে না তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেজন্য আমরা অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালাটা করে রাখতে চাচ্ছি। তারপর আমরা তো বলেছি, যে পদ্ধতিতেই পরীক্ষা হোক না কেনো আমরা কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ আগে নোটিশ দিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করব। প্রয়োজনবোধে তা ৬ সপ্তাহও হতে পারে। যেন কারো কোনো সমস্যা না হয়। আমরা আগামীকাল এই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করব। পরবর্তী সময়ে তা সিন্ডিকেটে পাশ হলে অফিসিয়াল রেকর্ড হবে। এই নীতিমালার ভিত্তিতে ফ্যাকাল্টির ডিনরা ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা বসে সিদ্ধান্ত নিবেন যে সরাসরি পরীক্ষা নিবেন নাকি অনলাইনে পরীক্ষা নিবেন। অথবা কিছু অংশ অনলাইন আর কিছু অংশ সরাসরি দুইভাবে নেয়ার চিন্তাভাবনা করতে পারে। এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে অনলাইনেই নিতে হবে বা সরাসরিই নিতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে আমরা সরাসরি পরীক্ষা নিবো। তবে করোনা পরিস্থিতি যদি পরবর্তীতে আবার খারাপ হয় তাহলে আমরা অনলাইনেই পরীক্ষা নিবো।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড আইটি দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জল কুমার আচার্য্যকে সদস্য সচিব করে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া কমিটিতে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সরকার আলী আককাস, ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল বাকী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরা জাহান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিনকে সদস্য করা হয়। এরই মধ্যে কমিটির সদস্যরা অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিয়েছে। যা ডিনস কমিটির সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনলাইন কিংবা সশরীরে যে কোনো মাধ্যমেই দ্রুত পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাচ্ছে।
এর আগে চলতি বছরের মে-জুন মাস থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা এমনকি নীতিগত সিদ্ধান্তের খবর পাওয়া যায়। তবে এ বছরের ১৩ জুন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ১০ আগস্ট থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকে থাকা সব সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তার প্রায় এক মাস পর ১২ জুলাই অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের এক জরুরি সভায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি বিবেচনায় ১০ আগস্ট অনুষ্ঠেয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং পরীক্ষা শুরুর পূর্বে চার সপ্তাহ সময় দিয়ে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।