বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বণিক শ্রেণি’ ও ‘নব্য সুবিধাভোগী’ চক্রের হাতে বন্দি বিএনপি

  •    
  • ৩০ আগস্ট, ২০২১ ১৯:৫৮

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা শুধু সিলেট নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও বঞ্চিত নেতাদের কথা বলছি। বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা যদি এ সমস্ত বিষয়ে দৃষ্টি না ফেরান, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।’

সিলেটে বিএনপি ‘বণিক শ্রেণি’ ও ‘নব্য সুবিধাভোগী’ চক্রের কাছে বন্দি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির সিলেটের বেশ কয়েকজন নেতা। এই চক্রের কাছ থেকে দলকে উদ্ধারেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এমন দাবি জানানো হয়। সিলেট নগরীর মিরাবাজারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সিলেট বিএনপির টালমাটাল অবস্থার মধ্যে এই সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির কয়েকজন নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রজ্জাক বলেন, ‘হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর পুণ্যভূমি সিলেট বিএনপি পরিবার আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিগত তিন-চার বছর থেকে সিলেট বিএনপি পরিবারে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সিলেট জেলা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন কমিটি গঠনে অনিয়ম ও অসাংবিধানিক তথা সাধারণ রাজনৈতিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সংগঠনকে ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।

‘ছাত্রদলের গঠন প্রক্রিয়ায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের বাদ দেয়া হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, রহস্যজনকভাবে তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। মর্মান্তিক হলো, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

রাজ্জাক বলেন, ‘জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি গঠনের সময় যারা তিল তিল করে যুবদলকে সংগঠিত করেছিলেন, তাদেরও যুবদলে স্থান দেয়া হয়নি। যুবদলে রাজপথের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের বাদ দেয়ার কারণে সিলেট বিএনপি পরিবারে এক বিস্ফোরণ্মেুাখ পরিবেশ তৈরি হয়। এমতাবস্থায় সিলেটের চারজন কেন্দ্রীয় নেতা মাঠ পর্যায়ের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের চাপে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে মহাসচিবের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে নেতারা পদত্যাগ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হন।’

গত ১৭ আগস্ট সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদক। এই কমিটি ঘোষণার পরই বিএনপিতে বিদ্রোহ দেখা দেয়।

নিজেদের বলয়ের নেতারা কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় এই কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন জেলা বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা। কমিটি ঘোষণার পরদিনই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান পদত্যাগের ঘোষণা দেন। দলের মহাসচিব বরাবর পদত্যাগপত্রও ওই দিন পাঠান তিনি।

এরপর গত ১০ দিনে সিলেটে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এমন পরিস্থিতিতে সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সর্বশেষ সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখানেও আমরা লক্ষ্য করলাম- যারা রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবক দলকে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে তৈরি করেছিলেন, তাদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে বিএনপিতে পদধারী কিছু লোককে কমিটিতে স্থান দেয়া হলো।

‘ফলে স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর ও জেলার বেশির ভাগ নেতা-কর্মী রাগে ও ক্ষোভে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আমরা বিএনপি পরিবার অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত।’

তিনি বলেন, ‘দুর্দিনে যারা জীবন বাজি রেখেছিলেন তাদের মধ্যে সামসুজ্জামান জামান অন্যতম। জামানসহ নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের আজ দলে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তাদের বেছে বেছে দল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আজকে কিছু ব্যক্তিবিশেষকে দলে সুবিধা করে দেয়ার জন্য, দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত করে রাখার চেষ্টা চলছে।’

রাজ্জাক বলেন, ‘আজকে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। কিছু মানুষ এই দলের এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য দলটিকে তার ব্যক্তিগত জায়গীর হিসেবে ব্যবহার করছেন।’

আজকে ‘বণিক’ শ্রেণি ও ‘নব্য সুবিধাভোগী চক্রের’ কাছে দল জিম্মি হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি দল এবং জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন যেখানে মুখ্য হওয়ার কথা, সেই দিক থেকে আমরা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছি। আজকে যুব ও তরুণ প্রজন্ম আদর্শহীনতার রাজনীতির কারণে রাজনীতিটাকেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু সিলেট নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও বঞ্চিত নেতাদের কথা বলছি। বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা যদি এ সমস্ত বিষয়ে দৃষ্টি না ফেরান, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা সেলিম আহমদ, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আহমেদুল হক চৌধুরী মিলু, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সুদ্বীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, মহানগর বিএনপির তাঁতীবিষয়ক সম্পাদক ফয়েজ আহমদ দৌলত, সহতাঁতীবিষয়ক সম্পাদক হাজী শওকত আলী, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন লস্কর, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মিনহাজ উদ্দিন মুসা, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য ও সাবেক জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদিক, জেলা বিএনপির সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা জাসাসের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আহমদ রানু, জেলা তাঁতী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল হক, মহানগর বিএনপির সদস্য আব্দুল গফফার, ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান মোহন, জেলা বিএনপির সাবেক সহপ্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আজমল হোসেন রায়হান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মওদুদুল হক মওদুদ, জেলা বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মতিউল বারী খুর্শেদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল খান, মহানগর জাসাসের সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন আহমদ মাসুম, মহানগর বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, জেলা বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক বেলাল, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক খালেদুর রশিদ ঝলক, মহানগর বিএনপির সহ-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল ফরহাদ, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য জসিম উদ্দিন, আবুল খায়ের দেওয়ান নিজাম খান, সিলেট জেলা জাসাসের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান এইচ খান, বিএনপি নেতা দুদু মিয়া, শামীম আহমদসহ আরও অনেকে।

এ বিভাগের আরো খবর