এবারের বর্ষায় দীর্ঘমেয়াদি বন্যা দেখতে হয়নি তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের। তবে, তিন দফা নদীর পানি বাড়ায় ভোগান্তি হয়েছে তাদের। বাড়িঘরে পানি ওঠায় অনেকই চলে যান আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা দূরের কোনো আত্মীয়র বাড়িতে।
গত কয়েক দিন ধরে পানি নামতে থাকায় তাদের অনেকেই বাড়ি ফিরে এসেছেন।
তবে, রোববার থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ফুলে-ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে তিস্তা। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তীরের মানুষের মনে। বাড়িঘর কিছুটা গুছিয়ে নেয়ার পর আবার ছাড়তে হয় কি না এই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি খুব বেশি বাড়বে না।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, রোববার দুপুর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১২ মিলিমিটার। আরও দুই থেকে তিন দিন বৃষ্টি থাকতে পারে।
এই মৌসুমে চলতি মাসে তিন দফায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা পাড় করে। এতে তলিয়ে যায় জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। এর মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নই গঙ্গাচড়ায়। এ কারণে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী, কোলকোন্দ, নোহালী, মর্নেয়া ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের মানুষ।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পূর্ব ইচলী গ্রামের বাদল মিয়া বলেন, ‘এবার যে কী হইল… অনেকের বাড়িটারি তো ভাঙ্গি গেইল। পানি নামা শুরু করিল, হামরা যারা পানিত আচনোং, তামরা (তারা) বাড়িত উটমো (উঠবো)। ফির পানি বাড়োছে।’
ওই গ্রামের আজিবর রহমান বলেন, ‘একবার বন্যা যদি হয়া যায় তাইলে বাড়িঘর ঠিকঠাক করা যায়। ক্ষতি হলেই আবাদ সুবেদ করা যায়। এমন করি বারেবারে পানি বাড়লে কেংকা করি কী হইবে। ওয়া (রোপা) গারমো (রোপণ) পানি খায়া যাইবে। ফির গারমো ফির খাইবে। এত খরচ তো করা যাইবে না। এবার হামরা এহনা আতঙ্কে আছি।’
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘পানি বাড়া-কমা আমাদের জন্য কষ্টকর। এত মানুষকে সহযোগিতা করা দুরূহ ব্যাপার। ফের পানি বাড়তেছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব সহযোগিতা করার।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, তিস্তার পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে তা বিপৎসীমার ওপরে নয়। বৃষ্টির পানি তিস্তার জন্য হুমকি নয়। ছোট ছোট নদীতে পানি বাড়ে। ভারতে বন্যা বা অতিবৃষ্টি হলেই তিস্তায় পানি বেড়ে যায়।