নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘু শব্দটি তাদের মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি আয়োজিত জন্মাষ্টমীর এক আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে সকলের সমান সুযোগ ও অধিকার রয়েছে। আপনারা নিজেদের মাইনরিটি ভাববেন না। এ শব্দটি আপনাদের মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে। আপনারা দেশের উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। আপনারা দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে একজন মুসলমানের যে অধিকার, আপনাদেরও তেমনি সমান অধিকার রয়েছে।’
খুলনার রূপসা ও সুনামগঞ্জের শাল্লায় মন্দির ভাঙা ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার প্রসঙ্গও উঠে আসে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে।
এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অবস্থান এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারা ধরা পড়েনি, তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে একটি অশুভ চক্র, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এ দেশের হাজার বছরের ঐতিহ্যে আঘাত হানার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কোনো ভয় নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একই আকাশের নিচে বাস করি। অভিন্ন বাতাসে শ্বাস নিই। অভিন্ন মেঘমালা থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টিতে আমরা ফসল ফলাই। তাই বলব, বিভেদের কৃত্রিম প্রাচীর গড়তে যারা অপচেষ্টা করে, তারা কোনোদিন সফল হবে না।’
নিজের বক্তব্যে ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে হিন্দুদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচারের কথা স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনও একটি মহল অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আঘাত হানে নানা কৌশলে। তাদের অপচেষ্টা এখনও চলছে। একটি মহল আছে, তারা দুর্বৃত্ত। এদের কোনো রাজনীতি নেই। দুর্বৃত্তদের একই দল। এই দুর্বৃত্তায়ন যারা করে, তারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে, বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে। এটা সরকারের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র।’
যারা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সম্পত্তি দখল করতে চায়, তাদের কোনো রাজনীতি নেই দাবি করে কাদের বলেন, ‘এরা দুর্বৃত্ত। এদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।’
নিজ দলের কেউ এসব অপকর্মে জড়িত থাকলে, তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীকে উদ্দেশ করেও বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। কাদেরের বক্তব্যে সীমান্ত হত্যার বিষয়টিও উঠে আসে।
তিনি বলেন, ‘সীমান্তে মাঝে মাঝে কিছু বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। এগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য উভয় দেশের সরকার সচেতন রয়েছে। এটা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। আমি আশা করি, সামনে পরিস্থিতির আরও পরিবর্তন হবে।’
তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘আমাদের অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনেও আলোচনার ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার পজিটিভ। আমি আশা করি, এ আলোচনা একসময় আলোর মুখ দেখবে।’