রাহেলা বেগমের বয়স ৭৫ বছর। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভৈরব গ্রামের বাসিন্দা।
৬০ বছর ধরে যমুনার পাড়ে তার বসবাস। স্বামী বাহেজ উদ্দিনের সঙ্গে ৩০ বছর কাটিয়েছেন যমুনার চরে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ভাঙনের কবলে পড়েন তিনি।
দুই সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেন কালিহাতীর ভৈরবে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেও হানা দেয় প্রমত্তা যমুনা। একে একে চারবার ঘর তোলেন রাহেলা।
কিছুদিন আগে বিলীন হয়েছে সেই নতুন ঘরও। কাঁদতে কাঁদতে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বামীর সংসার করতে গিয়ে ১০ বার বাড়ি পাল্টাইছি। এখন তো আর যাবার জায়গা নাই বাবা। আর কতবার বাড়ি পাল্টাব? এভাবে আর পাল্টাতে পারতেছি না।
‘প্রতিবছর দেখি সরকারি লোক আসে আর বলে যায় আর ভাঙব না। কিন্তু যখন বন্যা আসে তখন আর কাউকে দেখা যায় না। আমরা ত্রাণ চাই না, শুধু চিরস্থায়ী বাঁধ চাই। যাতে করে আর বাড়ি পাল্টাতে না হয়।’
রাহেলার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভাই এখন আর বাড়ি পাল্টাতে চাই না। কতবার বাড়ি পাল্টাব বলেন! এদিকে চরে নাই কোনো কাজ কামাই। কী দিয়া নতুন ঘর তুলব?’
৬০ বছরের আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, ‘ছেলে সন্তান নিয়ে ১২ বার বাড়ি সরাইলাম আর পারতেছি না। আমাদের দিকে সরকার যদি না তাকায়, তাহলে আমাদের মরণ ছাড়া উপায় নাই। আমরা যামু কই? যাবার তো জায়গা নাই।’
স্থানীয়রা আরও জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার মধ্য চরাঞ্চলসহ টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর, মির্জাপুর, বাসাইল ও নাগরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ডাম্পিং করছি কিন্তু তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। পানি কমে গেলেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আতাউল গনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভাঙনকবলিত এলাকায় ৯০টি পরিবারের মাঝে ৫ হাজার করে টাকা, চাল-ডাল ও টিন দিচ্ছি সরকারের পক্ষ থেকে।
‘যাদের একেবারেই সব চলে গিয়েছে তাদেরও সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’