করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মতো এবারও শুভ জন্মাষ্টমী উদযাপিত হচ্ছে ঘরোয়াভাবে। সনাতন ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথিতে প্রার্থনা, পৃথিবী থেকে যেন অচিরেই বিদায় নেয় এই ভাইরাস।
মহামারির কারণে জন্মাষ্টমীতে এবারও আমেজ নেই পুরান ঢাকায়। শোভাযাত্রা, র্যালি, মিছিল জন্মাষ্টমীর প্রধান আকর্ষণ হলেও গত বছরের মতো এসবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করতে বলেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
পুরান ঢাকার ‘শাঁখারীবাজার একনাম কমিটি’ পরিচালিত শ্রীশ্রী শ্রীধর জিউ বিগ্রহ ও শ্রীশ্রী বংশীবাদন জিঁউ বিগ্রহ মঠের প্রধান পুরোহিত অজয় চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে জানান, পুরান ঢাকার সনাতন ধর্মানুসারীরা ঘরোয়া ও পারিবারিকভাবে দিনটিকে উদযাপন করছে।
শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা শিখা রানি সাহা। তার আট বছরের ছেলে অয়নকে নিয়ে স্থানীয় একটি মার্কেট থেকে রাধাগোবিন্দের পোশাক কিনেছেন বাসায় ঘরোয়াভাবে জন্মাষ্টমী উদযাপন করবেন বলে।
শিখা রানি বলেন, ‘করোনা মহামারি থেকে যাতে মানুষ মুক্তি পায় এবং পরিবারের লোকজন যেন সুস্থ থাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমীতে সেই প্রার্থনা।’
সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কৌশিক দেবনাথ মন্দিরের দানবাক্সে টাকা দান করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ইষ্ট দেবতার কাছে প্রার্থনা, মহামারিসহ সব অমঙ্গলের চিহ্ন সমাজ থেকে দূর হোক।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতেই পৃথিবীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। অত্যাচারী স্বৈরশাসক কংসরাজকে বধ করেছিলেন তিনি।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নানা সাজে সেজেছে পুরান ঢাকার মন্দিরগুলো। রয়েছে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নানা কর্মসূচি।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্বামীবাগ আশ্রমে ছয় দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ইসকনের সদস্য ও কর্মী শান্তি রায় নিউজবাংলাকে জানান, ঢাকাসহ সারা দেশে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে।
এর মধ্যে রাজধানীর স্বামী ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রভু জগদ্বন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, রাধামাধব জিউ দেব বিগ্রহ মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রাধাগোবিন্দ জিউ ঠাকুর মন্দির, শিবমন্দির, রামসীতা মন্দির, মাধব গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন মন্দিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া পুরান ঢাকার ওয়ারী, লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার, লালবাগ, বংশাল, নিমতলা, চকবাজার, মিটফোর্ড কলোনিসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট পরিসরে বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে।
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সুজনের রক্ষায় কৃষ্ণ যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন করেন। মহামারি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে তিনি যেন আবারও আসেন, এই আমাদের প্রার্থনা। এ ছাড়া, বিশ্ব থেকে সব ধরনের হিংস্রতা, কুটিলতা, পাপ যেন আগুনে ভস্ম হয়ে যায় সেটিও আমাদের প্রার্থনায় রয়েছে।’