সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষে উৎসবমুখর রাজধানীর বকশি বাজারের ঢাকেশ্বরী মন্দির। চলছে আরাধনা। শিশুদের আকুতি দ্রুত যেন খুলে দেয়া হয় স্কুল।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র জন্মতিথিতে তার ভক্তরা বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়, তখন সেই অসুন্দরকে দমন করে জাতিকে রক্ষা এবং শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে।
স্বর্গ থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথিকে ভক্তরা শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। এ উদযাপনে পৃথিবীকে করোনাভাইরাস মুক্ত করতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে আকুতির শেষ নেই তার ভক্তদের।
সকাল ৮টা থেকে গীতা পাঠের মাধ্যমে ঢাকেশ্বরীতে জন্মাষ্টমী উদযাপন শুরু হয়। গীতাযজ্ঞ শুরু হলে মন্দিরে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে জমায়েত হতে থাকেন ভক্তরা। প্রার্থনার বড় অংশজুড়েই করোনাভাইরাস থেকে দেশ ও জাতির মুক্তি চাওয়া হয়।
মায়ের সঙ্গে গীতাযজ্ঞে অংশ নিতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসে স্কুল শিক্ষার্থী মনোবীর। ভগবানের কাছে তার প্রার্থনা স্কুল যেন দ্রুত খুলে দেয়। মনোবীর বলেন, ‘অনেকদিন ধরে আমার স্কুল বন্ধ। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারিনা। আমি চাই দ্রুত স্কুল খুলে দিক।’
বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এর মধ্যে দেশে এই ভাইরাসে ২৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এই ছুটি দফায় দফায় বাড়িয়ে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। সরকার থেকে বলা হয়েছে, করোনার সংক্রমণের হার আর একটু কমলে খুলে দেয়া হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
মনোবীরের মা বলেন, ‘পৃথিবী থেকে করোনাভাইরাস দূর হয়ে যেন পূর্বের মতো আবার সুন্দর হয় এবং স্কুল কলেজ খুলে দেয়া হয় এটাই প্রার্থনা।’
কলেজ শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী বলেন, ‘সব ধরনের অন্যায় অসাম্য আগুনে ভষ্ম হয়ে যেন পৃথিবীটা আবার সুন্দর, পবিত্র হয় এটাই আজকের প্রার্থনা।’
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল বলেন, ‘অধর্ম ও দুর্জনের বিনাশ এবং ধর্ম ও সুজনের রক্ষায় কৃষ্ণ যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন করেন। মহামারি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে তিনি যেন আবারও আসেন, এই আমাদের প্রার্থনা। এ ছাড়া, বিশ্ব থেকে সব ধরনের হিংস্রতা, কুটিলতা, পাপ যেন আগুনে ভষ্ম হয়ে যায় সেটিও আমাদের প্রার্থনায় রয়েছে।’
শোভাযাত্রা, র্যালি, মিছিল জন্মাষ্টমীর প্রধান আকর্ষণ হলেও করোনা মহামারির কারণে গত বছরের মতো এবছরও এসবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করতে বলেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
গীতাযজ্ঞ শেষে দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হয় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাত ৮টা থেকে শুরু হবে কৃষ্ণ পূজা।
কিশোর রঞ্জন মন্ডল বলেন, ‘সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী এবারও আমাদের র্যালি শোভাযাত্রা হবে না।। আমরা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা প্রাঙ্গণে আসার অনুরোধ করেছি৷ সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গীতাযজ্ঞে অংশ নিয়েছে।’