মাগুরা পৌরসভার কাশিনাথপুর এলাকার একটি বাড়ি নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে চলছে উত্তেজনা। এলাকার লোকজন বলছেন, ওই বাড়িতে গত আট দিন ধরে পড়ে আছে একটি মরদেহ। সেটি ভেতরে রেখে দরজা প্লাস্টার করে বন্ধ করে দিয়েছেন ওই ব্যক্তির স্বজনরা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি ভেঙে মরদেহ উদ্ধারে সেখানে সোমবার সকাল থেকে অবস্থান নিয়ে রেখেছেন এলাকার মুসল্লিরা।
এলাকাবাসী বলছেন, মৃত ব্যক্তির নাম তৈয়ব আলী। তার দুটি কিডনিই নষ্ট ছিল। এক মাস বাড়িতে শয্যাশায়ী থাকার পর চলতি মাসের ২২ তারিখ তার মৃত্যু হয়।
স্বজনদের তিনি আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, মারা যাওয়ার পর মরদেহ যেন তার নিজ পাকা ঘরে রেখে দেয়া হয়। ঘরের দরজা যেন প্লাস্টার করে দেয়া হয়। সেই কথা রাখেন তার পরিবারের লোকজন।
বলাবলি হচ্ছে, এভাবে গত আট দিন ধরে ওই ঘরে পড়ে আছে তৈয়ব আলীর মরদেহ। দরজা প্লাস্টার দিয়ে বন্ধ করা। পুরো ঘরে নেই কোনো জানালা।
এ ঘটনায় এলাকার মুসল্লিরা ক্ষুব্ধ কয়েক দিন ধরেই। তারা বলছেন, ধর্মীয় রীতি মেনে তৈয়বের দাফন করা উচিত। তবে, ওই পরিবারের লোকজন তা মানেননি।
ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান। মাগুরা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার আসিফ আল আসাদ মেলিন ও গ্রামের মাতব্বররা সোমবার সকালে হাতুড়ি-বাটাল নিয়ে ওই বাড়িতে হাজির হয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত এলাকার মুসল্লিদের নিয়ে তারা ওই ঘর ঘিরে রেখেছেন।
ওই পরিবারের প্রতিবেশী জাভেদ মোল্যা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তৈয়ব আলী বিয়ে করেননি। তিনি ইসলামি বেশভুষায় চলতেন। নিয়মিত নামাজও পড়তেন। তিনি কোনো এক পীরের অনুসারী ছিলেন। তবে কোন পীর তা বলতে পারি না। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন, তখন দেখতাম ঘর থেকে বের হতেন না।
‘সারা বছর দেশের নানা প্রান্তে পীর আওলিয়ার মাজার ঘুরে বেড়াতেন তিনি। তার সঙ্গে কিছু মানুষজন মাঝেমধ্যে আসতেন। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া থেকে কিছু মানুষ তার সঙ্গে আসতেন। আমরা এসব কাজবাজ চাই না।’
স্থানীয় সজল হোসেন বলেন, ‘শুনেছি ২২ তারিখে তিনি মারা যান। এরপর তার জানাজায় অংশ নেন তার কিছু আত্মীস্বজন ও ভক্তরা। ভক্তদের কাউকে আমরা চিনি না। জানাজা শেষে তাকে তার বসবাসের ঘরটিতে রাখা হয়।
‘এরপর তার ভক্তরাই ইট-বালু-সিমেন্ট দিয়ে দরজাটি বন্ধ করে দেন। ওই ঘরে কোনো জানালা রাখা হয়নি। তাই আমরা কেউ বলতে পারছি না ঘরের ভেতরে কী কী আছে।’
সজল বলেন, ‘তৈয়ব আলীর ভাইবোন যারা ছিলেন, তারা সবাই নাকি তার এই শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে তার ভক্তদের সঙ্গে এই কাজ করেছেন।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই পাকা ঘরে দুটি কক্ষ। এর মধ্যে একটির দরজায় তালা ঝোলানো। আরেকটিতে দরজা প্লাস্টার করা। কোনো কক্ষেই জানালা নেই।
তবে সেখানে তৈয়ব আলীর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোববার এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানালে ওই বাড়ির অন্য সদস্যরা পালিয়ে যান।
ওয়ার্ড কমিশনার আসিফ আল আসাদ মেলিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গতকাল শুনেছি এখানে এ রকম একজন লোক মুসলিম হয়েও তার কবর দেয়া হয়নি। তাকে ঘরে রেখে অন্যরা প্লাস্টার করে দিয়েছেন।
‘আমি এও শুনেছি, তার ওই ঘরকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ অমুসলিম আচরণ করছেন। তারা এটাকে মাজার করতে চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া ওই ঘরকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়ে ভক্তরা আসর করছেন। এসব কাজ কিছুতেই মেনে নিচ্ছেন না এলাকার মানুষ। তাই ঘরটি ভেঙে দেয়া প্রয়োজন।’