বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাজে লাগছে না ২ কোটি টাকার স্লুইসগেট

  •    
  • ৩০ আগস্ট, ২০২১ ১২:৫২

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাতক্ষীরা জেলায় পানি নিষ্কাশনে তৈরি করা অধিকাংশ স্লুইসগেটের কোনো কার্যকারিতা নেই। পাউবো একের পর এক অপরিকল্পিত স্লুইসগেট নির্মাণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে। কোমরপুরের স্লুইসগেটটিও তেমনই একটি প্রকল্প।

সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর ইউনিয়নের কোমরপুর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন বছর আগে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দুই কোটি টাকায় হাজিখালি খালের মুখে নির্মিত স্লুইসগেটটি কোনো কাজেই আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাতক্ষীরা জেলায় পানি নিষ্কাশনে তৈরি করা অধিকাংশ স্লুইসগেটের কোনো কার্যকারিতা নেই। পাউবো একের পর এক অপরিকল্পিত স্লুইসগেট নির্মাণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে। কোমরপুরের স্লুইসগেটটিও তেমনই একটি প্রকল্প।

তাদের অভিযোগ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর গত তিন বছরে এক ফোঁটা পানিও বিল থেকে নদীতে নিষ্কাশন করতে পারেনি স্লুইসগেটটি। উল্টো নদীর পানি বিলে ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সাতক্ষীরার পাউবো কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি দুর্যোগপূর্ণ, বন্যাকবলিত ও লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকা। এ অঞ্চলে বন্যানিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, কৃষিজমি সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততা থেকে রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা বিভাগ-২-এর আওতায় পোল্ডার রয়েছে সাতটি।

এর মধ্যে পোল্ডার ২ ও সম্প্রসারিত ২-এর আওতায় পড়েছে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও আশাশুনি উপজেলা। পোল্ডারটির পূর্বে বেতনা নদী ও দক্ষিণ-পশ্চিমে মরিচ্চাপ নদীবেষ্টিত।

পাউবো কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় উপকৃত এলাকায় জমির পরিমাণ ১১ হাজার ২৯৬ হেক্টর। এখানে বাঁধ রয়েছে ৬২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার এবং স্লুইসগেট রয়েছে ২১টি। খাল রয়েছে ৬৫ দশমিক ২২০ কিলোমিটার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্লুইসগেটগুলোর মধ্যে দু-একটি ছাড়া প্রায় সব কটি অকেজো। পানি নিষ্কাশনে কোনো ভূমিকায় রাখতে পারছে না কোটি কোটি টাকার প্রকল্পগুলো।

কোমরপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম সরদার জানান, কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরা সদর হয়ে আশাশুনি পর্যন্ত বেতনা নদীর দুই তীরের গ্রামগুলো পানিতে ডুবে আছে। জুলাইয়ে তিন দিনের বৃষ্টিতে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ডুবে গেলেও হাজিখালি খালের মুখে নির্মিত স্লুইসগেটটি দিয়ে কোনো পানিই নিষ্কাশন হয়নি।

তিনি আরও জানান, তিন উপজেলার শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, কবরস্থান, রাস্তাঘাট ডুবে রয়েছে প্রায় এক মাস। রান্নাঘরের চুলা ডুবে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হাজারও পরিবার। বাড়িতে যাতায়াত করতে রাস্তার ওপর সাঁকো তৈরি করা হয়েছে।

রফিকুল বলেন, ‘কলারোয়া থেকে আশাশুনি পর্যন্ত বেতনার তীরে জলাবদ্ধতা। ফসল ও ঘরহারা মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। পানিতে ভাসছে বাড়িঘর, পুকুর, মাছের ঘের, কবরস্থান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।’

একই গ্রামের নূর ইসলাম সরদার বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় আমাদের আয়ের উৎস মৎস্যঘের। আমরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। এ বছর সামান্য বৃষ্টিতে সব তলিয়ে যায়। এখনো গ্রামের পর গ্রাম পানিতে। প্রায় দুই কোটি টাকার হাজিখালি বিলের স্লুইসগেট পানি নিষ্কাশনে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না।’

স্থানীয় একজন বলেন, ‘কোন আক্কেলজ্ঞানে এখানে স্লুইসগেট নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, তা আমাদের জানা নেই।

‘যেখানে বিলের থেকে নদী উঁচুতে, সেখানে স্লুইসগেট নির্মাণের মানে সরকারি টাকা লুটপাট করা ছাড়া আর কিছুই নয়। অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। কী দরকার ছিল দুই কোটি টাকা পুঁতে রাখার? যে স্লুইসগেট এক ফোঁটা পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা রাখে না, সেই গেট নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই।’

এলাকাবাসী জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী খনন করতে হবে। বেতনা নদীর আগের মানচিত্র অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। দখলদারদের হাত থেকে বেতনা নদীকে রক্ষা করতে না পারলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না।

স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘বেতনা নদীর হাজিখালি খালের মুখে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ের স্লুইসগেটটি জনগণের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারছে না। আর কোনো দিন পারবেও না, যদি নদীর আদি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা না যায়।’

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। নতুন স্লুইস কোথায়, কয়টি, কত টাকায় নির্মিত হয়েছে, তা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানাব।’

এ বিভাগের আরো খবর