বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলারের (সাড়ে ১৩ লাখ কোটি টাকা) বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য এজন্য ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বা ব্যবসা সহজীকরণ এবং কানিক্টিভিটি উন্নত করতে হবে।
রোববার এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এ সম্ভাবনার কথা বলেন। আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থানগত সুবিধা তুলে ধরে বলা হয়, দেশটি হতে পারে রপ্তানি হা
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বক্তব্য দেন। ছবি: নিউজবাংলা
ব।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার বলেন, বর্তমানে ২৫টি পণ্য বাদে সকল পণ্যই শুল্কমুক্তভাবে ভারতে রপ্তানি করা যায়। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে ২০১১ সালে এ উদ্যোগ নেয়া হয়।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ভিত দাঁড়াবে বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করেই। দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক বাণিজ্যর অপার সম্ভাবনা হচ্ছে সাউথ এশিয়ায়। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের বড় অংশীদার হচ্ছে ভারত। সাউথ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হচ্ছে বাংলাদেশে। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ আমাদের সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে অনেক কোম্পানিই আগ্রহ দেখাচ্ছে। কয়েকটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। শুধু ভারতীয় বিনিয়োগ নয়, এখানে থেকে পুনঃরপ্তানি হচ্ছে। সাউথ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি রপ্তানি তথা বাণিজ্যিক হাব হতে পারে। এখান থেকে ভারতের সেভেন সিস্টারসহ মিয়ানমারের একটি অংশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
বক্তারা বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান, সড়ক, রেল ও নদী পথের যোগাযোগ সম্ভব। এটি একটি অনন্য সুবিধা। পৃথিবীর খুব কম রাষ্ট্রের পক্ষেই এটি সম্ভব। এমনকি ভারতের সঙ্গে সীমান্ত থাকা অন্যান্য দেশেরও এটি নেই। এ চার মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়াতে পারলে দুই দেশই উপকৃত হবে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে এক প্রবন্ধে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (বাণিজ্য) প্রমেশ বাসাল বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য কয়েক দশকে বেড়েছে। এটি আরও বাড়বে। যোগাযোগ সুবিধা বাড়লে বাণিজ্য যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বাড়বে। এজন্য ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধাগুলো ধীরে ধীরে দূর হবে। বর্তমানে ভারতে রপ্তানির বেলায় বাংলাদেশি পণ্যের অতিরিক্ত কোনো চার্জ নেই। এটি ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা পাচ্ছে।’
বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। এর গন্তব্য হচ্ছে মূলত ইউরোপের দেশগুলো। কিন্তু পণ্য বৈচিত্র্যকরণ হলে ভারতেও রপ্তানি বাড়বে। বিশেষ করে চামড়া, খাদ্য ও কৃষি পণ্য যেগুলো নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ। এটি হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে রেলওয়ের নেটওয়ার্ক বাড়ানো ও এর সামাজিক সুবিধার বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতীয় হাইকমিশন ঢাকার রেলওয়ের উপদেষ্টা আনিতা বারিক।
তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের আগ থেকেই এ অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগ ছিল। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে পুনরায় রেলের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়। সাতটি রুটের মধ্যে বর্তমানে ৫টি সচল হয়েছে। সবগুলো রুট চালু হলে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। আগের অর্থবছরে ১১০ কোটি ডলারের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ৫৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের। তার আগের অর্থবছরে ৭৬৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। বর্তমানে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গেই বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি।