বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাকা ঘুরল, মেট্রোরেলে যাত্রী চড়বে কবে

  •    
  • ২৯ আগস্ট, ২০২১ ২২:৪৬

মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল রোববার শুরু হলেও সাধারণ যাত্রীদের এ ট্রেনে চড়তে কমপক্ষে আরও দেড় বছর সময় লাগবে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালু হতে পারে মেট্রোরেল।

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক চলাচল বা টেস্ট রান শুরু হয়েছে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের। ট্রেনটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে ছয়টি বগি নিয়ে ভায়াডাক্টের (লাইন) ওপর দিয়ে দিয়াবাড়ি ডিপো থেকে যাত্রা করে পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে আবার ডিপোতে ফিরে আসে।

আনুষ্ঠানিকভাবে লাইনে গড়াল মেট্রোরেল। কিন্তু কবে যাত্রী নিয়ে এটি ছুটবে, প্রশ্ন কৌতূহলী রাজধানীবাসীর।

মেট্রোরেলের পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, টেস্ট রান হচ্ছে, ট্রেন চলাচলের প্রথম ধাপ, আরও অনেক কাজ বাকি। যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হলে বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হবে মেট্রোলেরলকে।

ডিএমটিসিএলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার লাইনের সমন্বিত অগ্রগতি হয়েছে ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

এটির প্রথম অংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার লাইনের অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ট্র্যাক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং গাড়ি কেনায় ৬০ দশমিক ৬৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

রোববার টেস্ট রান উদ্বোধন করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, ‘আগামী বছরের শেষ নাগাদ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। বছর শেষে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের মেট্রোরেল লাইন-৬ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

ঢাকার বাসিন্দারা বলছেন, মূলত দুই কারণে তারা মেট্রোরেল চালুর অপেক্ষায় রয়েছেন। এর একটি হচ্ছে দ্রুত ও নিরাপদ এ গণপরিবহনের স্বাদ নেয়া। অপরটি হচ্ছে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি। কারণ প্রকল্পের মূল খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণযজ্ঞ চলার কারণে সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকার মানুষকে। একই সঙ্গে এ এলাকার বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও এর জন্য আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের হিসাবে স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়তে রাজধানীবাসীকে কমপক্ষে আরও দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু দেড় বছরেই অপেক্ষা আরও বড় হবে কি না, সে প্রশ্নও থাকছে। কারণ এর আগে দুই দফায় এ ট্রেন চালুর ঘোষণা হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।

মেট্রোরেল প্রকল্পের (এআরটি-৬) বাস্তবায়ন কাল ২০১২-২০২৪ সাল। এ রুটে দীর্ঘ পথের মধ্যে পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০১৯ সালের মধ্যে এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০২০ সালের মধ্যে চালু করার নির্দেশ দেন। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হলে কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল সেবা চালু করা হবে। এখন সেই অংশই ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চালুর কথা হচ্ছে।

টেস্ট রান শুরুর প্রথম দিন মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে উৎসুক জনতার একজন ফারুক হোসেন বলেন, ‘আগেও তো কইছিল মেট্রো চালু করব, পারে নাই, এইবার কি পারব? ম্যালা বছর ধইরাই তো মেট্রোর কাজ দেখতাছি, কিন্তু শ্যাষ তো হইতাছে না। এইডা শ্যাষ হইব কবে? আমরা উডমু কবে?’

একই প্রশ্ন করলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, ‘আসলে মানুষের আশঙ্কা তো এমনিতেই তৈরি হয়নি। সব প্রকল্পেরই একই অবস্থা। বিআরটি ১০ বছর ধরেও হলো না। সরকারের কোনো প্রকল্পই সময় অনুযায়ী হয় না। অথচ আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করে ইন্দোনেশিয়া মেট্রোরেল তৈরি শেষ করে ব্যবহার করছে। আমাদের মেট্রো নিয়ে কতোবার স্বপ্ন দেখাল সরকার। যদিও কোভিড একটা বাস্তবতা, কিন্ত আরও দ্রুত শেষ করা উচিত ছিল।’

আশঙ্কা থাকলেও দেড় বছরেই মেট্রোরেল চালু হবে বলেও আশা করেন তিনি। বলেন, ‘মেট্রোর কাজে সামনে তো নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ দেখতে পাচ্ছি না। চ্যালেঞ্জের কাজগুলো প্রায় শেষ। চাইলেই রাউন্ড দ্য ক্লক কাজ করলে সময়ের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। করোনা ছাড়া অন্য কোনো কারণে এটা দেরি হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ সে সব চ্যালেঞ্জ ছিল, সেগুলো অতিক্রম করে আমরা কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফেলেছি।

‘যে মোমেন্টামটা এসেছে, সে মোমেন্টাম দিয়েই দ্রুত কাজ শেষ হওয়া উচিত। সব সময় যে কোনো কাজ প্রথম দিকে স্লথ থাকে, শেষ দিকে গতি বাড়ে। শুরুর দিকে যে গতি ছিল, তা এখন আর হিসাব করলে হবে না। তাই বলব, যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে তা দিয়ে দ্রুত কাজ করা সম্ভব, যদি আন্তরিকতা থাকে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগামী দেড় বছর পরেই ট্রেনে চড়তে পারব।’

ডিএমটিসিএল বলছে, রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রোরেল ব্যবস্থা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-৬ বা এমআরটি-৬ নির্মিত হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে। এর ‍রুটে চলবে ২৪ সেট ট্রেন। এর মধ্যে চারটি মেট্রোরেল সেট ইতোমধ্যে উত্তরা ডিপোতে পৌঁছেছে। ১৬টি স্টেশনের মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার জনকে বহন করতে সক্ষম। উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট, যে পথ বর্তমানে পাড়ি দিতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে।

জাপানের কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তৈরি প্রতি সেট ট্রেনে একবারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জনকে বহনের ক্ষমতা রয়েছে। মেট্রোরেলে পরীক্ষামূলক চলাচলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ-চালিত ট্রেনের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে দেশের সব ট্রেন ডিজেল দিয়ে চলে।

যে কারণে আরও দেড় বছর অপেক্ষা

রোববার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ট্র্যাকে চড়েছে মেট্রোরেল। তবে কাজের এখনও অনেক বাকি। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য মেট্রোরেল ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে চালানো হয় বলে জানান ঢাকা ম্যাস ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক।

রোববার (২৯ আগস্ট) মেট্রোরেল রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে অবস্থিত স্টেশন-১ থেকে যাত্রা শুরু করে। চারটি যাত্রীবাহী কোচ এবং সামনে ও পেছনে একটি করে ইঞ্জিন কারসহ মোট ছয়টি কোচের পুরো এক সেট ট্রেন ছিল এতে।

এম এ এন সিদ্দিক বলেন, ভায়াডাক্টে রেল ট্র্যাকে টেস্ট রান শুরু হয়েছে। সবকিছু সুচারুভাবে, সঠিকভাবে হয়েছে কি না এবং সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলের জন্য প্রস্তুত কি না, তা টেস্ট রানের সময় যাচাই করা হবে। পারফরম্যান্স পরীক্ষার পর ইন্টিগ্রিটি পরীক্ষা হবে।

তিনি বলেন, ‘এসব পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ছয় মাস থেকে এক বছর, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লেগে যায়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সার্ভিস চালু করার আগে কর্তৃপক্ষ একটি পরীক্ষামূলক চলাচলের ব্যবস্থা করবে। যাত্রী নিয়ে ও যাত্রী ছাড়া– দুই ধরনের ট্রায়াল রান সম্পন্ন করতে ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’

বাকি কাজের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মোট ১৬টি মেট্রোরেল স্টেশনের মধ্যে প্রথম নয়টি মেট্রোরেল স্টেশনের কনকোর্স, প্রথম পাঁচটি মেট্রোরেল স্টেশনের প্লাটফর্ম ও প্রথম চারটি মেট্রোরেল স্টেশনের স্টিল রুফ স্ট্রাকচার এবং তিনটি মেট্রোরেল স্টেশনের রুফ শিটিংয়ের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট মেট্রোরেল স্টেশনসমূহের নির্মাণকাজ বিভিন্ন পর্যায়ে অব্যাহত আছে।

‘ডিপোর অভ্যন্তরে রেললাইন স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর মেইন লাইনে ১৭ দশমিক ২৪ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম পাঁচটি মেট্রোরেল স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত করে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি স্থাপন ও সফলভাবে টেস্ট করা হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর ১৭ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার ওভারহেড কেটেনারি সিস্টেম (ওসিএস) ওয়্যারিং সম্পন্ন হয়েছে।’

সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজ প্রথম মেট্রোরেল সেটের ভায়াডাক্টের ওপর পারফরমেন্স টেস্টের সূচনা হয়েছে। এই টেস্ট সার্বিকভাবে সম্পন্ন করতে প্রায় ছয় মাসের প্রয়োজন হবে। পারফরমেন্স টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার পর প্রায় তিন মাসের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট করা হবে। ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট শেষে ও বাণিজ্যিক চলাচল শুরুর পূর্বে প্রায় পাঁচ মাসের যাত্রীবিহীন ট্রায়াল রান করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর