বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বচ্ছতার সঙ্গে সেবা দিতে চায় এসএফআইএল

  •    
  • ২৯ আগস্ট, ২০২১ ২১:৩৭

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যাত্রা শুরু করে এক বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্রাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড। ভালো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে থেকে অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আস্থা অর্জন করেছে। এক বছর পূর্তি উপলক্ষে নিউজবাংলা কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতেজা আহমেদ খানের সঙ্গে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে স্থবির হয়েছে উৎপাদন; থমকে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে স্বাভাবিকভাবেই সংকুচিত হয়েছে কর্মসংস্থান। তবে দম বন্ধ করা সময়কে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে দুই-একটি প্রতিষ্ঠান। অর্থায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ কেউ। তাদের মধ্যে অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্রাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড (এসএফআইএল)।

করোনার মধ্যে যাত্রা শুরু করে দিন দিন বাড়ছে এটির পরিসর। ভালো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে থেকে অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করায় তৈরি হয়েছে সম্ভাবনা। অল্প কিছুদিনেই আমানতের টাকা ফেরত দেয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে; নিশ্চিত হয়েছে আর্থিক স্বচ্ছলতা।

এসএফআইএলের এ অগ্রযাত্রার বিষয়ে জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতেজা আহমেদ খানের সঙ্গে।

নিউজবাংলা: করোনাকালে কার্যক্রম শুরু করেছে স্ট্রাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড। মহামারির মধ্যে এক বছরের কাজ কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ইরতেজা আহমেদ খান: করোনাকালীন এক দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে যাত্রা শুরু করলেও আমাদের পরিচালনা পর্ষদ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। আপৎকালীন সময়ে সুন্দর একটা কোম্পানি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি সামাজিক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিল। পর্ষদের দিকনির্দেশনা মোতাবেক ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ আমরা কাজ শুরু করি। নিয়মতান্ত্রিক সব মেনে পথচলা শুরু। এরপর দীর্ঘ লকডাউনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খোলা রাখা হয়।

‘স্বচ্ছতার বন্ধন’ স্লোগান সামনে রেখে করোনার মধ্যে শুরু করে এক বছরের এই পথচলায় বেশ সাফল্য অর্জন করেছি। প্রথম চার মাসেই সব নিয়ম মেনে প্রফিট করেছে প্রতিষ্ঠান। এটা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিষয়। খুব সীমিত আকারে আমানত সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন বাধার মধ্যে এ সফলতা অনুপ্রেরণামূলক।

ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সীমিত আকারে গ্রাহক ভালোভাবে যাচাই করেছি। করোনার কারণে পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী শিল্প, ভৌত অবকাঠামো, হোম লোন, গাড়ি লোনসহ বিভিন্ন কাজে অর্থায়ন করেছি।

১০০ কোটি টাকার পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্টে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। পাওয়ার না থাকলে ইন্ডাস্ট্রি সেক্টর উন্নতি করতে পারবে না। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। এর পেছনে পাওয়ার সেক্টরের বড় অবদান রয়েছে।

এক বছরে আর্থিক সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমাদের নিট লাভ ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিনিয়োগ ১০৬ কোটি টাকা। উৎপাদন, রপ্তানিমুখীসহ বিভিন্ন খাতে ঋণ দেয়া হয়েছে ৬৭ কোটি টাকা। আমানতের পরিমাণ ৪১৯ কোটি টাকা। এর বাইরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি প্রায় ৪০ জনের ওপরে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের (সিএসআর) আওতায় একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাবারে পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে একত্রিত হয়ে কাজ করছি।

স্বল্প সময়ের মধ্যে একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমানতের টাকা ফেরত দেয়ার ক্ষমতা, আর্থিক সচ্ছলতা, ব্যবস্থাপনা দক্ষতার কারণে ক্রেডিট রেটিংয়ে ভালো অবস্থানে আছি। এটা নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সফলতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিটা নিয়মকানুন মেনে আমরা কাজ করেছি। প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতার ব্যাপারটায় আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ‘স্বচ্ছতার বন্ধন’ স্লোগান মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

আমরা ইতোমধ্যে স্ট্রাটেজিক ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলার অনুমতি পেয়েছি। খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউস হিসেবে সেবা দিতে পারব।

নিউজবাংলা: নতুন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহে কোনো চ্যালেঞ্জ বা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না?

ইরতেজা আহমেদ খান: আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে মনে হয়েছে প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের পরিচিতি আরও বাড়ানো দরকার। পরিচিত বাড়ালে গ্রাহক পর্যায়ে আমানত সংগ্রহের যে পরিকল্পনা, সেটা বেগবান করা যাবে। বিশেষ কয়েকটি কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অনেকের নেতিবাচক ধারণা আছে।

একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখতে হলে যে বিষয়গুলো দেখা উচিত, আমরা সেটা আগে তুলে ধরি। কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট, বোর্ড কি প্রাতিষ্ঠানিক নাকি ব্যক্তিপর্যায়ে, সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেয়। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিপর্যায়ের বোর্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সে ক্ষেত্রে সুশাসনে অনেক সমস্যা হয়।

আমাদের ৯৮ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার প্রাতিষ্ঠানিক। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ কানাডা ও আমেরিকার সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) রয়েছে। আর বাকি ২ শতাংশ ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ফলে সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা পরিধি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। এটা আমাদের শক্তি। আমানতকারীদের আস্থা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা একটা ভালো উদাহরণ হতে পারে।

নিউজবাংলা: ইদানীং বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণে অনিয়ম হয়েছে। এ জন্য ঋণ বিতরণে আপনাদের পলিসি বিষয়ে কিছু বলুন।

ইরতেজা আহমেদ খান: ঋণ বিতরণে আমরা অনেক সতর্ক। আমানত ৪১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করলেও বিনিয়োগ ও অর্থায়ন করেছি ২০০ কোটি টাকা। এখনও হাতে ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আছে। আর্থিক ভিত মজবুত রাখার জন্য এ টাকা হাতে রাখা। বিনিয়োগ বা অর্থায়ন সেখানেই করব যেখানে আমার টাকা আটকাবে না।

ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সীমিত আকারে গ্রাহক ভালোভাবে যাচাই করে ঋণ দিয়েছি। করোনার কারণে পরিস্থিতি অনুকূল ছিল না। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী শিল্প, ভৌত অবকাঠামো, হোম লোন, গাড়ি লোনসহ বিভিন্ন কাজে অর্থায়ন করেছি।

আমাদের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) শূন্য। আমরা দেখেশুনে ফাইন্যান্স করছি। একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছি। আমানতকারীরা টাকা ফেরত চাইলে যেন সঙ্গে সঙ্গে সেটা দিতে পারি, এটাই আমাদের পরিকল্পনা। আমানত সুরক্ষা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।

নিউজবাংলা: নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামনে আপনাদের কী ধরনের কর্মপরিকল্পনা আছে?

ইরতেজা আহমেদ খান: সুন্দরভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান চলতে হলে মূলধন লাগবে। আমাদের মূলধন হলো আমানত, যেটা গ্রাহকের কাছ থেকে আসে। গ্রাহক ছাড়াও আমানতে বিভিন্ন উৎসের মধ্যে অন্যতম ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ভালো করতে হলে কস্ট অফ ফান্ড কমাতে হবে।

সামনে কস্ট অফ ফান্ড আরও কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ আমানত সংগ্রহে বেশি খরচ হলে ঋণ বিতরণ করা যাবে না।

ব্যবসা বহুমুখী করার চিন্তা রয়েছে। শুধু আমানত সংগ্রহ করে সেটা নয়, স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা আছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা থাকবে। এতে কস্ট অব ফান্ড কমবে। বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

কস্ট অব ফান্ড বা পরিচালন ব্যয় কমানোর জন্য এসব পদক্ষেপ নেয়া হবে। এককেন্দ্রিক না হয়ে অর্থায়নের উৎসগুলো বহুবিধ করা।

স্বল্প সুদে বিভিন্ন প্রগতিশীল, উন্নয়নমুখী ও রপ্তানিমুখী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা সম্প্রসারণে অর্থায়ন করতে পারব। আমরা এটা অর্জন করতে চাই।

টেকসই টেকনোলজি সুবিধার মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে চাই। আমাদের প্রক্রিয়াগুলো অটোমেটেড করতে চাই। গ্রাহক পর্যায়ে ব্রাঞ্চ নয়, মোবাইলের মাধ্যমে পৌঁছাতে চাই। প্রযুক্তিগত সুবিধার মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হবে।

মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে এ কাজ করার পরিকল্পনা আছে।

নিউজবাংলা: শাখা খোলার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

ইরতেজা আহমেদ খান: শাখার খোলার আগে আমরা বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার খুলব। ঢাকা শহরকে চারটি জোনে ভাগ করে এটা করা হবে। ঢাকা শহরে দুটি বিজনেস সেন্টার খোলা হবে। সেখানে সেলস স্টাফরা বসবে। সেন্টারের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানোর চেষ্টা থাকবে। তারপর গ্রাহকদের পক্ষ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ার পর শাখা খুলব।

আগামী বছর দুটি শাখা খোলার পরিকল্পনা আছে। তার আগে দুটি সেলস সেন্টার খোলা হবে।

নিউজবাংলা: আপনার গ্রাহকদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

ইরতেজা আহমেদ খান: আমরা একটি প্রগতিশীল ও ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। আমরা সেবা নিয়ে গ্রাহকদের স্বচ্ছতার সাথে সেবা দিতে চাই। প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতার প্রতিফলন রাখতে চাই। প্রাতিষ্ঠানিক যেকোনো বিনিয়োগে, আমানত সুরক্ষার বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কাজ ও সেবা করতে চাই।

এ বিভাগের আরো খবর