মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার (এমবিবিএস) প্রকাশিত ফলাফল কেন বাতিল বা অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র আদালতে দাখিল করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চেয়েছে আদালত।
১০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটনি ছিলেন নওরোজ রাসেল চৌধুরী।
২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল বাতিল চেয়ে গত ১৬ আগস্ট ১৯৫ জন এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার্থীর পক্ষে রিট করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
আইনজীবী হুমায়ন জানান, গত ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে অসংখ্য ভুল এবং বড় ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। প্রচারিত ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী একজন পরীক্ষার্থী কোনো মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি যদি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তবে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৭.৫ নম্বর কর্তন করা হবে। আবার কোন পরীক্ষার্থী যদি গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকে তাহলে তার ৫ নম্বর কাটা যাবে।
তিনি বলেন, প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যায় অনেক পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এই নিয়মটি পালন করা হয়নি। যেসব পরীক্ষার্থীদের ৭.৫ নম্বর কর্তন করার কথা, সেখানে মাত্র ৫ নম্বর কর্তন করা হয়েছে। ফলে এসব ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ২.৫ নম্বর বেশি দিয়ে মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আবার প্রথমবার পরীক্ষায় যেখানে কোনো নম্বর কাটবার কথা নয়, সেখানে অনেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকেই ৫ নম্বর কর্তন করে মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এই আইনজীবী জানান, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী অন্তত দুটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর ছিল দুটি করে। অন্তত তিনটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর ছিলনা। সংরক্ষিত জেলা ও উপজাতি কোটার আসন পূরণেও ব্যাপক অসঙ্গতি করা হয়েছে। ঢাকা জেলা কোটা আবেদনকারী পরীক্ষার্থীকে দেখানো হয়েছে মেহেরপুর জেলার পরীক্ষার্থী হিসেবে। উপজাতি কোটায় সংরক্ষিত আসনে অসংখ্য সাধারণ ছাত্র ছাত্রীকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এসব ত্রুটি ও অসংগতি রেখে মেধা তালিকা প্রণয়ন করার ফলে হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী পরীক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার মুখে পড়েছেন। এসব কারণে প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করে এবং এসব ত্রুটি ও অসংগতি সংশোধন করে নতুন মেধা তালিকা প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বরং ত্রুটিপূর্ণ মেধাতালিকার ভিত্তিতেই মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ২২ মে ২০২১ ইং তারিখ হতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে।
রিটের পক্ষে শুনানি করা হুমায়ন জানান, ত্রুটিপূর্ণ মেধা তালিকার ভিত্তিতে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অর্থই হলো প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করা। তাদের আজীবন লালিত আকাঙ্ক্ষা চিকিৎসাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত করা। সেই সঙ্গে দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া, যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ৩১, ৩২ ও ৪০ এর পরিপন্থি।
গত ২ এপ্রিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের ১৯টি কেন্দ্রের ৫৫টি ভেন্যুতে ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫৬ জন। আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন শিক্ষার্থী।
দুই দিন পর প্রকাশ করা হয় ভর্তি পরীক্ষার ফল। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন। এর মধ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর জন্য নির্বাচিত হন ৪ হাজার ৩৫০ জন। নির্বাচিতদের মধ্যে চলমান শিক্ষাবর্ষের ছিলেন ৩ হাজার ৯৩৭ জন। আগের শিক্ষাবর্ষের ছিলেন ৪১৩ জন।