সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে দুই দফায় খালি হাতে ঘরে ফেরা বিএনপি আবার আন্দোলনে নামতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো বিকল্প নেই এখন রাস্তায় নেমে আসা ছাড়া। এটা কেবল মাত্র রাজনৈতিক দল বিএনপি নয় এবং শুধু মাত্র বিরোধী দলগুলো নয় সবাইকেই নেমে আসতে আসতে হবে।’
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শত নাগরিক জাতীয় কমিটি’র এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি নেতা।
সরকার দেশে অত্যাচার চালাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আজকে কিন্তু প্রত্যেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, কেউ কিন্তু বাদ যাচ্ছেন না। তাই সবাইকেই রাস্তায় নেমে আসতে হবে।
‘এরা একটি দেশবিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই দেশবিরোধী শক্তিকে সরাতে হলে অবশ্যই আমাদের সকলকেই আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তাদেরকে পরাজিত করবার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। জনগণকে সংগঠিত করতে হবে এবং এদেরকে পরাজিত করতে হবে।’
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি দুই দফায় আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ফিরেছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফা আর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সে সময়ের সরকারের এক বছর পূর্তিতে দ্বিতীয় দফায় সরকার পতনের আন্দোলনে নামে বিএনপি ও তার মিত্ররা।
সে সময় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে তারা শেষ পর্যন্ত অংশ নেয়। আর ভোটে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফলাফল করার পর থেকে আবার এক দফা আন্দোলনে নামার ঘোষণা এসেছে বারবার।
গত জুলাইয়ে শাটডাউন শুরুর আগেও টানা কয়েকটি সমাবেশ করে বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছিল বিএনপি। তবে বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার পর আর জমায়েতের সুযোগ ছিল না।
গত ১১ আগস্ট শাটডাউন শিথিল হওয়ার পর বিএনপির নেতারা আবার নানা কর্মসূচিতে সমবেত হচ্ছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা বলছেন।
ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার শুধু দানব নয়, তারা সবকিছুকে তছনছ করে দিয়েছে। এই যে শিক্ষাঙ্গনের অবস্থা দেখুন। আজকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ছেলেরা একটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে গেছে তাদের একজন সহকর্মীর মুক্তির জন্য। সেই খানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশসহ তাদের ওপর নির্মমভাবে আঘাত করেছে, অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে।
‘কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে আমাদের মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নবগঠিত নেতাকর্মীরা ফুল দিতে গেল। সেদিনও কোনো ধরনের উসকানি ছাড়া কোনো রকম ঘটনা ছাড়াই সেখানে ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টি করল।
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা ওইদিন ১৮৭ রাউন্ড গুলি করেছে। তারা ৪২ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। সেদিন আমাদের আমান উল্লাহ আমান, আমিনুল ইসলাম এবং আমাদের প্রায় ৬২ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।’
ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখছেন যে, প্রতি মুহূর্তে যেই একটু কথা বলছে, তাদের (সরকার) মতের সঙ্গে মিল হয় না… তার প্রতি তারা চড়াও হচ্ছেন, তাকেই তারা আক্রমণ করছেন।
‘আজকে সত্যিকার অর্থেই এই ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র তৈরি করেছে। তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমাদের ভবিষ্যত বংশধরকে যদি সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ দিতে চাই, তাহলে আমাদের সকলকেই জোটবদ্ধ হতে হবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শত নাগরিক জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুসতাহিদুর রহমান স্মরণে এই আলোচনায় বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী মাহবুব উল্লাহ, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ, আব্দুল হাই শিকদার, আব্দুল কাদের গনি চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।