বিদেশি পর্যটকদের কাছে টানতে কক্সবাজারে বিশেষ অঞ্চল করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে রানওয়ের সমুদ্র সম্প্রসারণকাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে রোববার সম্প্রসারণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি বিচ, পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। সেইভাবে পুরো কক্সবাজারকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ করব।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘রানওয়েটা এমনভাবে সম্প্রসারণ করতে চাই যাতে বিশ্বের বড় বড় বিমানগুলো নামতে পারে, রিফুয়েলিং করতে পারে, তারা আসতে পারে। আমাদের কক্সবাজার যে পর্যটন কেন্দ্র, সেটাকে আমরা আরও আধুনিক, সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র করব। সেখানে যেন সকলে এসে আমাদের দেশটাকে উপভোগ করতে পারে। তা ছাড়া এটা হলে পরে আমরা আর্থিকভাবে অনেক স্বচ্ছল হব। সেটার দিকেও আমাদের দেখতে হবে।’
সমুদ্র সম্প্রসারণ করে যারা এ কঠিন কাজটাকে বাস্তব রূপ দিচ্ছেন তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় পরিবেশবাদীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু পরিবেশবিদ আছেন, তারা যা পায় তার ওপর লাফ দিয়ে পড়েন। কোনোকিছুর আগা-মাথা বোঝেটোজে না। কিন্তু তাদের প্রতিবাদ করাটাই একটা বড় কথা। যাই হোক সেগুলো, মোকাবেলা করেই আজকে আমরা সম্প্রসারণের কাজটা শুরু করতে যাচ্ছি।’
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই সম্প্রসারণ কাজের মধ্য দিয়ে।’
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত উন্নয়ন পৌঁছে যাবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্যান্ডি বিচ যেটা বলে, এটা খুব কম আছে পৃথিবীতে। সেখানে আমরা বিদেশিদের জন্য স্পেশাল জোন করে দেবো, যেখানে শুধু বিদেশিরা আসতে পারবে এবং তারাই যেতে পারবে। তারা তাদের মতো করে যেন উপভোগ করতে পারে, সে ব্যবস্থাটা করে দেয়ার আমাদের পরিকল্পনা আছে।’
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এয়ারপোর্টটা সম্প্রসারণ হলে আমি মনে করি যে, পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্য বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে, তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সবথেকে বেশি সুবিধাজনক জায়গা হবে এই কক্সবাজার।’
হংকং, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের পর কক্সবাজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘খুব স্বল্প সময়ে (বিমান) এখানে এসে নামতে পারবে। রিফুয়েলিং করতে পারবে, যেতে পারবে। পাশাপাশি আমরা এত চমৎকার করে কক্সবাজারকে সাজাবার পরিকল্পনা নিয়েছি।
‘সোনাদিয়াতে আমরা ইকোপার্ক করে দেবো, যেখানে ন্যাচারাল বিউটি থাকবে। সেখানে জীবজন্তুর পাশাপাশি শামুক, ঝিনুকসহ সামুদ্রিক স্পেসিসগুলোও যেন রক্ষা পায়। মানুষ যেন সেখানে গিয়ে উপভোগ করতে পারে। সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি। মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তর হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটাকে সামনে রেখেই সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে আমরা পরিণত করতে চাই আমাদের দেশটাকে, যাতে আর্থিকভাবে আমাদের দেশ অনেক লাভবান হবে।’
বিমান পরিচালনায় পরিবর্তন আসছে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে বিমানের কর্মীদের যে ডিজাইনের পোশাক তৈরি করা হয়েছিল, সেটি আজও রয়ে গেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের বিমান যাবে, কাজেই তাদেরও একটু পরিবর্তন দরকার। পৃথিবীর সব দেশেই পরিবর্তন করে। আমরা মূল ইয়েটা ঠিক রেখে পরিবর্তন করে আরও আকর্ষণীয় করে দিয়েছি।
‘সেই সঙ্গে আরও আকাঙ্ক্ষা আছে যে, বিমান যারা চড়বেন, তারাও স্বাভাবিকভাবে…কারণ বিমান যখন কোথাও যায়, সেটাও বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সেদিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে।’
আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সেভাবে আমাদের পাইলট ট্রেনিং, পাইলট তৈরি করা, ক্রুদের তৈরি করা বিমানবালাদের তৈরি করা—সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।’
যাত্রীদের এসে যেন অনেকক্ষণ বসে থাকতে না হয়, সেদিকেও নজর দিতে তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনা
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরি করে দেয়া হবে। তাতে যেমন সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস থেকে এ অঞ্চল বাঁচবে, দৃষ্টিনন্দনও হবে; পর্যটকদের জন্য সুবিধা হবে।’
কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারের রাস্তাটাকেও আন্তর্জাতিক মানের উন্নত রাস্তা হিসেবেও আমরা তৈরি করে দিচ্ছি, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কক্সবাজারের যে সি-বিচ, পৃথিবীর কোনো দেশে এত লম্বা বালুকাময় সি-বিচ নেই। ৮০ মাইল লম্বা সি-বিচ। কাজেই এটাকে আরও উন্নত করে আকর্ষণীয় করা ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার তার একটা স্বপ্ন ছিল।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে যারা ক্ষমতায় আসে, তারা তো অনেক বড় বড় কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। জাতির পিতাকে নিয়ে অনেক কুৎসা রটনা করেছিল। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনাগুলো নষ্ট করেছিল। তারা তো বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করেনি। কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করত না।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া—এরা কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না; বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উন্নতিতেও বিশ্বাস করে না। তাই যদি করত ১২ বছরে আমরা যা করেছি ২১ বছরে তারা তা করতে পারত, করেনি। তারা করবে না।’