হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হন আবুল হোসেন। চিকিৎসক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এনজিওগ্রাম করানোর পরামর্শ দেন। তবে তার আগে লাগবে করোনা নেগেটিভ সনদ।
হাসপাতালে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় নমুনা পাঠানো হলো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে। নিয়ম অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নমুনার ফল দেয়ার কথা থাকলেও সেই ফল মিলেছে পাঁচ দিন পর। জানা গেল, আবুল হোসেন করোনা পজিটিভ।
করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে পিছিয়ে গেছে এনজিওগ্রাম। কিছু মেডিসিন দিয়ে তাকে পাঠানো হয়েছে গ্রামে। এনজিওগ্রাম প্রয়োজন হলেও অপেক্ষা করতে হবে দুই সপ্তাহ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের সুযোগ না থাকায় অন্য হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার করাতে হচ্ছে। ফল দেরিতে আসায় অনেক রোগীর সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফল জানার আগেই করোনার উপসর্গ থাকা অবস্থায় রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। আবার যেসব জেলায় করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কেন্দ্র নেই, সেসব জেলায় পরীক্ষার ফল পেতে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে।
একই অবস্থা সারা দেশে। নমুনা দিয়ে ফল পেতে ১০ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত লাগছে। এতে করে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি চরম বিপাকে পড়েছেন জটিল রোগের রোগীরা। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে সংক্রমিত হচ্ছেন। আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ঘটছে সামাজিক সংক্রমণ, কাজে আসছে না নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি না থাকায় নমুনা দিতে এসে নতুন করে করোনা ঘরে নিয়ে যাচ্ছে অনেকেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরীক্ষার ফল পেতে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার বেশি বিলম্ব মানা যায় না। ফল পেতে দেরি হলে রোগী ও তার স্বজনদের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপও তৈরি হয়। আবার উপসর্গ থাকা ব্যক্তি নমুনা দেয়ার পর ফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি না মানলে অন্যদের জন্য তা বিরাট ঝুঁকি তৈরি করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ২৮টি জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার থাকলেও নেই ৩৬টি জেলায়। এসব জেলার বাসিন্দাদের অ্যান্টিজেন ও জিন এক্সপার্ট পরীক্ষার ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে। জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে নমুনা পার্শ্ববর্তী পরীক্ষাগারে ও রাজধানীতে পাঠানো হয়, কিন্তু ফল পেতে ১০ থেকে ১২ দিন লেগে যাচ্ছে।
গত ২৬ জুলাই দেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা হয়। ওই দিন ৫৩ হাজার ৩১৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়। তবে বর্তমানে তা ২৫ হাজারে নেমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই মুহূর্তে দেশে সরকারি আরটি-পিসিআর রয়েছে ৫৫টি। এ ছাড়া, ৫১টি যক্ষ্মা শনাক্তে ব্যবহৃত কার্টিজ বেজপ নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট (সিবি ন্যাট) বা জিন এক্সপার্ট ও ৫৪৫টি পরীক্ষাগারে চলছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল্লাহ শাহরিয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় ঢাকা মেডিক্যালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে র্যাপিড অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয়, এই ব্যবস্থা আমাদের এখানে নেই। যে কারণে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে রোগীদের। অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা থাকলে দ্রুত সময়ে রোগীদের অপারেশন করার ব্যবস্থা করা যেত। আমাদের হাসপাতাল থেকে এই পরিস্থিতি কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আমল বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারে যদি করোনা নেগেটিভ সদন ছাড়া নেয়া হয়, তাহলে যারা ওই রোগীর সার্জারি করবেন, তারা সবাই করোনা সংক্রমণে ঝুঁকিতে পরতে পারেন। এই কারণে সব রোগীকে করোনা নেগেটিভ সদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে অনেক হাসপাতালে এখন র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ওখানে ৩০ মিনিটের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে।
‘আমি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালকদের বলব, তারা যেন এই বিষয়ে মানুষের প্রতি মানবিক হন। র্যাপিড আরটিপিআর টেস্ট করার জন্য নতুন ৩০টি মেশিন কেনার প্রস্তুতি চলছে।’