নারীদের অধিকার আদায় এবং নারীদের সুরক্ষায় আত্মপ্রকাশ ঘটেছে ‘স্ফুলিঙ্গ’ নামে একটি সংগঠনের। বলা হচ্ছে, নারীর বিরুদ্ধে মোরাল পুলিশিং, গণমাধ্যমের অসংবেদনশীলতা এবং আইন ও বিচার বিভাগে পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে কাজ করবে এই প্ল্যাটফর্ম।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলরুমে ‘স্ফুলিঙ্গ’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর আগে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ‘নারীর বিরুদ্ধে মোরাল পুলিশিং, গণমাধ্যমের অসংবেদনশীলতা এবং আইন ও বিচার বিভাগে পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে আমরা’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল হয়। এতে অতিথিরা সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
‘স্ফুলিঙ্গ’-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোরাল পুলিশিং এবং গণমাধ্যমে নারীর ব্যক্তিগত জীবনকে উন্মুক্ত করে কেলেঙ্কারীকরণের সংবাদ প্রচার করে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক জনমতকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। রাষ্ট্রীয় প্রভাবশালীদের অপরাধকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়।
পাশাপাশি বিচার বিভাগ বিশেষ ক্ষমতাশীল গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব এবং আইন রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আইনের অপব্যবহার করে নারীদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে বলেও মন্তব্য স্ফুলিঙ্গের।
সংগঠনটি মনে করে, রাষ্ট্র এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘদিনের অগণতান্ত্রিক এবং পুরুষতান্ত্রিক চর্চাই নারীর বিরুদ্ধে এই অন্যায্যতা তৈরি করছে।
বৈঠকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ উল্লেখ করেন, নারীকে মজুরি কম দিতে এবং প্রতিবাদ থামানো সহজ হয় তখন, যখন তার ব্যক্তিগত চরিত্রকে উন্মুক্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডামূলক তথ্য প্রচার করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সানজিদা নীরা বলেন, ‘গণমাধ্যম এবং বিজ্ঞাপনসমূহ তাদের কাটতি বাড়াতে নারীদের নিয়ে এই অসংবেদনশীল সংবাদ পরিবেশন করে। নারীকে এভাবে উপস্থাপন না করেও যে গণমাধ্যম চলতে পারে, এই ধারণায় আসতে হবে।’
বৈঠকে আলোকচিত্রী এবং বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের সদস্য জান্নাতুল মাওয়া তার সাংবাদিকতা পেশাজীবনের একটি উল্লেখ্য ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, তিনি অতীতে একটি গণমাধ্যমে কাজ করতেন। ওই গণমাধ্যমটি একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর বিরুদ্ধে অসংবেদনশীল সংবাদ প্রকাশ করতে দায়িত্ব তাকে দিলে তিনি সেই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
বৈঠকে নারীর বিরুদ্ধে মোরাল পুলিশিং, গণমাধ্যমের অসংবেদনশীলতা এবং আইন ও বিচার বিভাগে পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে স্ফুলিঙ্গের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
০১. গণমাধ্যমকে মুক্ত এবং স্বাধীন করতে হবে।
০২. আইনের অপব্যবহার করে নাগরিকের ব্যক্তিপরিসরে ঢুকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা বন্ধ করতে হবে।
০৩. প্রতিটি গণমাধ্যম এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে নারীর বিরুদ্ধে অসংবেদনশীল আচরণ, শব্দচয়ন এবং ছবি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
০৪. গণমাধ্যমে নারীর বিরুদ্ধে অসংবেদনশীল সংবাদ পরিবেশন, শব্দচয়ন এবং ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
০৫. প্রত্যেক সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীকে উল্লিখিত নীতিমালা বিষয়ে অবগত করতে হবে এবং জেন্ডার সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
০৬. নারীর বিরুদ্ধে সমাজের প্রচলিত মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকতে হবে।
০৭. নারীর সহিংসতাসংক্রান্ত অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে হবে। এসব অভিযোগ তদন্ত না করে অভিযুক্তকে আইনি প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া যাবে না।
০৮. বিচার বিভাগকে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ করতে হবে।