বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা অন্য দেশের নয়, বরং এটি বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব মডেল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা দর্শন দুটো কোন দেশের আদলে নয়। এই দুই দর্শন একেবারেই দেশজ এবং বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব মডেল।
শনিবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদ।
সভায় উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতা, এটি দেশীয়। এটি বাঙালিদের ধর্মনিরপেক্ষতার আদলে গড়ে উঠেছে। কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি যেমন বঙ্গবন্ধুর শ্রদ্ধা ছিল একইভাবে অন্য ধর্মমতের প্রতি একটা সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি রেখে সেটিকে বিকশিত করাও ছিল বঙ্গবন্ধুর দর্শন। ফলে এটি বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব একটি মডেল। এটি এদেশের গণমানুষের মনের মডেল।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রটা না চাইনিজ না রাশিয়ান। সমাজে সম্পদের ডিস্ট্রিবিউশন কীভাবে করা হবে সে ব্যবস্থাটা অন্য দেশের মতো হতে পারে না। এটিও দেশীয়, যা মানুষের মাঝে বড় আকারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে না। কিন্তু মানুষ তার ইচ্ছায় গ্রহণ করবে, গণমানুষ উপকৃত হবে। এরকম একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বঙ্গবন্ধু তার দর্শনগুলো ভেবেছিলেন।
উপাচার্য রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন, আগে বলা যেতো, এই লোক জামায়াত করে, এই লোক শিবির৷ এখন কিন্তু কন্টেক্সট ভিন্ন! এখন তো অনেক দলই নেই। কিন্তু মানুষগুলো তো আছে। তাই আগের দৃষ্টিভঙ্গিতে এখন বিচার করলে চলবে না। এখন আমাদের অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করতে হবে।
উপাচার্য আরও বলেন, পাকিস্তানপন্থি বা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে এখন সংগঠন দিয়ে আইডেন্টফাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কে স্বাধীনতা বিরোধী, কে পাকিস্তানপন্থি, কে সাম্প্রদায়িক শক্তির অংশ—তা নির্ণয় করতে নতুন মাত্রার সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। আমাদের, আপনাদের নতুন মাত্রায় ভাবতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয় অবশ্যই ছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে দু-একটি বিদেশি দূতাবাসের যোগাযোগ ছিল৷ আমি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক, বিদেশের সম্পৃক্ততা থাকলেও অনেক সত্য কথা সবসময় বলা যায় না। তবে সত্য বেরিয়ে এসেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একাত্তরে যারা আমাদের বিপক্ষে ছিল তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রা তারা পছন্দ করেনি। তৃতীয় বিশ্বের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর উত্থান অনেকের সহ্য হয়নি। তবে একাত্তরে যারা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল তারাও যে সবাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এটাও সঠিক নয়।
আলোচনা সভায় ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ড. আবু মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, সহ-সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী, সিনিয়র সহ সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউসারসহ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদসরা উপস্থিত ছিলেন।