লকডাউনে কাজে ফেরা পোশাক শ্রমিকদের জন্য তিন হাজার টাকা ভাতা দেয়াসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে করোনার সময়ে পোশাক শিল্প ও শ্রমিকদের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় এই দাবি জানানো হয়।
সভায় আইবিসির সাবেক মহাসচিব তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘সরকার প্রণোদনার অর্থ মালিকদের দিয়েছে। সরকার করোনার সময় শতভাগ ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনে থাকা শ্রমিকদের অর্থনৈতিক সাশ্রয় করার অংশ হিসাবে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্য তেলসহ শিশু খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে বা প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহারের অংশ হিসেবে আড়াই হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দিতে পারতেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শ্রমিকদের নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যাথা নেই। ওরা মজদুর, খেটে যাওয়ার জন্য যাদের জন্ম, তাদের আবার দুঃখ কিসের। ভ্যাকসিন দেবার বর্তমান সিদ্ধান্ত গত বছর নিলে শ্রমিককে ঝুঁকি নিয়ে কাজে যেতে হত না। তবে এখনও পর্যন্ত পোশাক শিল্পের শ্রমিকদেরকে কারখানা পর্যায়ে ভ্যাকসিন দেয়ার গতি সন্তোষজনক নয়।’
সভায় আইবিসির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা শুরু না হওয়াটা দুঃখজনক। শ্রমিকের সংগঠিত হয়ে কথা বলার অধিকার, জীবনমান উন্নয়ন, চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, জীবনযাপন উপযোগী মজুরি প্রদানের নিশ্চয়তাই দিতে পারে কর্মক্ষম শ্রমিক, যারা আগামী দিনের করোনামুক্ত বিশ্বে পোশাক শিল্পের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে অন্যতম ভূমিকা রাখবে।’
বর্তমানে করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু সুপারিশও করেছে আইবিসি:
১। দ্রুততার সঙ্গে সব শ্রমিককে টিকা দিতে হবে।
২। লকডাউনের সময়ে আকস্মিক কর্মস্থলে আসা শ্রমিকদের প্রত্যেককে তিন হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ভাতা দিতে হবে।
৩। টিকা দেয়ার আগে পর্যন্ত সকল শ্রমিককে ২৫ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা এবং সরকার ঘোষিত কোনো লকডাউনে কাজ করলে ৫০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা দিতে হবে।
৪। সব ধরনের ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। আগে ছাঁটাই করা শ্রমিকদের আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
৫। লকডাউনের সময় সমন্বয়ের নামে জেনারেল ডিউটি বন্ধ এবং আগের করানোর সময়ে ডিউটির ওভারটাইম দিতে হবে। কোনো কারখানার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত তদন্ত করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে শিল্পাঞ্চলে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি এবং শিশুখাদ্য বিক্রির ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোকে ব্যবসার নৈতিকতা বজায় রেখে দেশীয় মালিকদের সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। শিল্পটি যেহেতু বৈশ্বিক তাই শ্রমিকদের বা শিল্পের কোনো সংকটে কার্যাদেশ স্থগিত, বাতিল বা মূল্য হ্রাসের চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮। করোনার সময়ে কোনো কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বা অসন্তোষ দেখা দিলে আলোচনার টেবিলে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই শ্রমিক বা নেতাদের আসামি করে ফৌজদারি মামলার মাধ্যমে উত্তেজনা উসকে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৯। শ্রমিক সংগঠন, মালিকপক্ষ এবং সরকার কে যেকোনো সংকট মোকাবিলায় সংলাপের মাধ্যমে প্রণিত সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
১০। শ্রমিকদের নিজস্ব কণ্ঠ সোচ্চারে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং যৌথ দর-কষাকষির সুযোগ দেয়ার পরিবেশ সরকার এবং মালিকদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।