রংপুরের মিঠাপুকুরের মির্জাপুর ইউনিয়নে গেলে দেখা যাবে, একটি খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে নবনির্মিত সেতু। এর দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। তবে দুই পাশেই লাগানো আছে মই। সেই মই বেয়ে উঠে-নেমে সেতু পার হতে দেখা যায় স্থানীয়দের।
সেতুর এক পাশে আছে বসতবাড়ি, আরেক পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দোকানপাট। প্রতিদিনই শত শত মানুষ মই বেয়ে সেতুতে উঠে খাল পাড়ি দেয়। এর দুই পাশে মাটি ভরাট না থাকায় বর্ষায় চলাফেরায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানালেন, প্রকল্প এখনও শেষ হয়নি। নির্মাণাধীন প্রকল্প বলে স্থানীয়দের এই ভোগান্তি হচ্ছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, হযরতপুর নামের খালটির ওপর ৩৬ মিটার লম্বা এই সেতুর নির্মাণে খরচ ধরা হয় ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৪০১ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সেতুর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান জানান, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এক মাস আগেই। তবে বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজে হাত দেয়া যায়নি। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার কথা আগামী নভেম্বর মাসে।
মুশফিকুর জানালেন, নভেম্বরের আগেই সংযোগ সড়ক তৈরি হয়ে যাবে। ততদিন স্থানীয়দের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতেই হবে।
স্থানীয় মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, সেতুর দুই পাশে রাস্তা নেই বলে চলাচলের সুবিধার জন্য গ্রামের লোকজন মিলে মই লাগিয়েছেন। তাতে ভোগান্তি হয় বলে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জানিয়েছেন তারা।
এলাকার আরেক বাসিন্দা নুর হোসেন জানান, সংযোগ সড়ক না হলে এই সেতু কোনো কাজে আসবে না। দুই পাশে দ্রুত মাটি ফেলা প্রয়োজন।
পিআইও মুশফিকুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই ব্রিজের কাজ করিয়েছি। এক মাস হলো ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। এখনও মাটি ভরাটের কাজ বাকি আছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে সেতুর কাজ শেষ না করে বিল হাতিয়ে নেয়া হয়েছ, যা সত্য নয়।
তিনি বলেন, ‘নট এ সিঙ্গেল পাই, একটি পয়সা বিল আমরা দিইনি। কাজই শেষ হয়নি, বিল দেব কী করে। যদি ব্রিজ হস্তান্তর হতো, কাজ শেষ হতো কিন্তু মাটি ভরাট হয়নি, তাহলে পত্রিকায় খবর করলে একটা কথা ছিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদার আরও এক বছর কাজের সময় পাবে।’
এক মাস আগে সেতু তৈরি হলেও সংযোগ সড়কের কাজ কেন শুরু হলো না? জবাবে পিআইও বলেন, ‘এই বর্ষায় শক্ত মাটি কোথায় পাব? শক্ত মাটি না দিলে তো অ্যাপ্রোচ সড়ক টিকবে না। আরও কষ্ট, বিড়ম্বনা বেড়ে যাবে। সেতু করা হয়েছে মানুষের উপকারের জন্য। রাস্তা হবে না কেন, রাস্তায় অবশ্যই মাটি ফেলা হবে। কারণ প্রকল্পের মোট বরাদ্দের ৫ ভাগ টাকা যায় এই অ্যাপ্রোচ সড়কে।’
প্রকল্পের ঠিকাদার বিকাশ চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত আমার কাজের সময় আছে। আমরা বিভিন্ন এলাকায় মাটি খুঁজে বেড়াচ্ছি। মাটি পাচ্ছি না। এমনকি ব্রিজের ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও মাটি নেই।
‘আমার লোক সেখানে টিল নাউ আছে। যেহেতু সময় আছে, আমি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এমনকি মাটি পেলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভরাট করে ফেলতে পারব। বর্ষায় কাদামাটি দিয়ে ভরাট করলে সেগুলো ধুয়ে যাবে। আবার মাটি থাকবে না। তখনও আপনারা লিখবেন, অনিয়ম হয়েছে। আমরা যাব কোথায়?’
মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া বলেন, চলাফেরায় দুর্ভোগ হচ্ছে বলে স্থানীয়রা তার কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। বিশেষ করে কৃষকদের ফসল নিয়ে মই বেয়ে ওই সেতুতে ওঠানামা করতে কষ্ট হয়।
তিনি জানান, প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা আশ্বাস দিয়েছেন যে সময়মতোই সেতুর কাজ শেষ হবে; গ্রামবাসীর ভোগান্তি দ্রুতই নিরসন হবে।