কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনায় পানি বেড়েছে ১১ সেন্টিমিটার।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের গেজ মিটার রিডার (পানি পরিমাপক) আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী জানান, বন্যাকবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা, আমনক্ষেত, বীজতলা, আখ, পাট, তিল, সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসল।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও চলনবিলের পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।
অন্যদিকে পানি বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন জেলার গো-খামারিরাও।
১৪ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা।
মালশাপাড়া বাঁধ এলাকার শাহানা খাতুন জানান, পাঁচ দিন ধরে তাদের বাড়িতে পানি উঠেছে। ছেলে-মেয়ে আর বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন। বৃষ্টি আর রোদে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এক বেলা রান্না করে তাদের তিন বেলা খেতে হচ্ছে।
কাওয়াকোলা গ্রামের জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘আমগোর পুরো গ্রাম বানের পানিত ডুইবা গেছে। আমরা সরকারের আশ্রয়কেন্দ্রে কেমনে যাবো। গরু ছাগল নিয়ে মহাবিপদ হয়েছে। টিউবয়েল ডুবে গেছে; খাওনের পানি, কোনো ত্রাণ পাইনি। কোনো মেম্বর-চেয়ারম্যান আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।’
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি উপপরিচালক আবু হানিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের চরাঞ্চলে যে সকল কালাই, ধান, ভুট্টা, বাদাম ও সবজি চাষ ছিলো তা সবগুলোই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এখনও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি।
‘কারণ বন্যার পানি এখনো বৃদ্ধি থাকায় অনেক নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করলে তখন জানানো যাবে।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। তবে পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বন্যার তেমন কোনো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের জানা আছে। আমরা নিয়মিত পানির খোঁজখবর রাখছি।’
তিনি আরও বলেন, পাঁচ উপজেলায় ১০০ টন চাল ও ১ লাখ করে নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা সেটা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ করবে।
এ ছাড়া জেলায় ৭৬ টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা করে মজুত রাখা হয়েছে। কোনো এলাকায় ত্রাণের প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়মিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।