বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিদেশ যেতে চাইলে খালেদাকে ফের জেলে যেতে হবে’

  •    
  • ২৮ আগস্ট, ২০২১ ১৫:৫০

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বিদেশ যেতে অনুমতি চায়, কিন্তু কথা হলো যে আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হলো সেটা পুনবিবেচনার ক্ষমতা আইনে আমাদের দেয়া হয়নি। তাহলে ওনাদের কী করতে হবে। সেটা হলো তাদেরকে আবার আবেদন করতে হবে। এখন আবার আবেদন করতে হলে আগের আবেদনটি বাতিল করে ওনাকে (খালেদা জিয়া) আবার জেলখানায় গিয়ে আবার আবেদন করতে হবে।’

বিদেশ যেতে সরকারের কাছে আবেদন করতে হলে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। বললেন, প্রচলিত আইনে এর বাইরে আর কোনো সুযোগ নেই।

রাজধানীর এক হোটেলে শনিবার ল রিপোর্টার্স ফোরাম ও এমআরডিআই আয়োজিত আইন সাংবাদিকতা বিষয়ে এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

কর্মশালায় প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে আলোচনা করেন আইনমন্ত্রী। ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ৪০১ ধারা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, সাজা মওকুফের ক্ষমতা সরকারের আছে। এ নিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় ছয়টি উপধারা আছে। এর মধ্যে একটিতে আছে সরকারের ক্ষমতা, সরকার কী করতে পারে। একজনের সাজা শর্ত ছাড়া সম্পূর্ণ মওকুফ করতে পারে অথবা শর্ত ছাড়া কিছুটা মওকুফ করতে পারে। আবার শর্ত সাপেক্ষে পুরোটা মওকুফ করতে পারে কিংবা কিছুটা মওকুফ করতে পারে বা সাসপেন্ড করতে পারে।

আনিসুল হক জানান, উপধারা-২ এ বলা আছে, যে কোর্ট সাজা দিয়েছে সেই কোর্ট সাজা মওকুফ করতে পারে, নাও পারে। উপধারাগুলোতে আরও অনেক কথা বলা আছে। এখানে কিন্তু কোথাও বলা নাই। একটা আবেদন যখন নিষ্পত্তি করে ফেলা হয়, সেই আবেদনটিকে আবার পুনরায় রিকনসিডার (পুনবিবেচনা) করতে পারবে। অর্থাৎ নিষ্পত্তিকৃত আবেদনটি পুনবিবেচনা করার কোনো সুযোগ নাই।

মন্ত্রী বলেন, ‘৪০১ ধারায় সরকারের ক্ষমতা বলা আছে। এই ৪০১ এর সংস্কারের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ব্যবহার করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা ব্যবহার করে। তাতে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী থেকে অনুমতি নিতে হয়। এটা প্রয়োগ করার আগেই রুল অফ বিজনেস অনুযায়ী আইনমন্ত্রণালয় থেকে মতামত নিতে হয়। এমন একটা বিষয় নিয়ে আমার মতামত দিতে হয়েছে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মামলার ক্ষেত্রেও মতামত দিতে হয়েছে। ওনার (খালেদা জিয়ার) আত্মীয় স্বজনের পক্ষ থেকে যখন আবেদন করা হলো, তখন তার সাজা স্থগিত করে ওনাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিলাম। তার মানে তার পক্ষে যে আবেদনটা ছিল তা নিষ্পত্তি হলো। ওনারা বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। আমরা কিন্তু তার অনুমতি দেয়নি। আমরা কিন্তু তাকে দুটি শর্ত দিয়ে মুক্তি দিয়েছি। সেই শর্ত মেনেই তিনি মুক্তি পেয়েছেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পরের ধাপে তারা বিদেশ যেতে অনুমতি চায়, কিন্তু কথা হলো যে আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হলো সেটা পুনবিবেচনার ক্ষমতা আইনে আমাদের দেয়া হয়নি। তাহলে ওনাদের কী করতে হবে। সেটা হলো তাদেরকে আবার আবেদন করতে হবে। এখন আবার আবেদন করতে হলে আগের আবেদনটি বাতিল করে ওনাকে (খালেদা জিয়া) আবার জেলখানায় গিয়ে আবার আবেদন করতে হবে।

‘এখন এটা তো অলরেডি একবার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। ওনাকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেয়ার ক্ষমতা ৪০১ ধারায় উল্লেখ আছে কিন্তু এটা বলা আছে শর্ত সাপেক্ষে। ৪০১ ধারার উপধারাতে আমাদের পুনবিবেচনার কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে সাড়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।

প্রথমে ২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।

এর মধ্যে করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছেন খালেদা জিয়া। গত ১৪ এপ্রিল তার করোনায় আক্রান্তের খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।

প্রথম দিকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেন খালেদা। পরে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ২৭ এপ্রিল তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ৯ মে তার করোনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ আসে।

তার পরও শারীরিক সমস্যা থাকায় প্রায় দেড় মাস হাসপাতালে থাকতে হয় খালেদা জিয়াকে। কিছুদিন সেখানকার করোনারি কেয়ার ইউনিটেও (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল তাকে। ৫৪ দিন চিকিৎসা শেষে ১৯ জুন গুলশানের বাসায় ফেরেন তিনি।

এই সময়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যেতে তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন।

চিঠিটি পর্যালোচনার জন্য আইনমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী জানিয়ে দেন খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর মতো কোনো বিধান দেশের প্রচলিত আইনে নেই

খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলে দল থেকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে করোনা প্রতিরোধী দুই ডোজ টিকাও নিয়েছেন তিনি।

খালেদা জিয়ার আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা রয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইয়াছিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি মাশহুদুল হক। দিনব্যাপী কর্মশালায় ল রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যরা অংশ নেন।

এ বিভাগের আরো খবর