রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে তার মরদেহ নেই প্রধানমন্ত্রীর পর এবার একই ধরনের মন্তব্য করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। বলেছেন, জানাজায় হাজার মানুষের সমাগম হলেও সেদিন কফিনে জিয়ার মরদেহ ছিল কি না সে সন্দেহ থেকেই যায়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন কাদের।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার জানাজার বিষয়টি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের জানাজার সঙ্গে তুলনা করে কাদের বলেন, ‘মানুষ একজন প্রেসিডেন্টের জানাজা পড়েছে, কিন্তু কফিনে যে লাশ ছিলো তা তো দেখাতে পারেননি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের জানাজায়ও হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল, কিন্তু কফিনে তো তার লাশ ছিল না।’
১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তাকে সমাহিত করা হয় সেখানেই। পরে সেখান থেকে সরিয়ে জিয়ার দেহাবশেষ চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করার কথা জানানো হয় বিএনপি থেকে। দেহাবশেষ কফিনে করে আনা হয়েছিল, কিন্তু কফিনের মুখ তখন খোলা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শোক দিবসের আলোচনায় সভায় কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীও। জানান, চন্দ্রিমায় জিয়াউর রহমানের কোনো মরদেহ নেই। এটা বিএনপিও জানে।
সম্প্রতি চন্দ্রিমা উদ্যানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আজকে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে গিয়ে যে মারামারি করল বিএনপি, তারা জানে না যে সেখানে জিয়ার কবর নাই, জিয়া নাই ওখানে, জিয়ার লাশ নাই? তারা তো ভালোই জানে। তাহলে এত নাটক করে কেন? খালেদা জিয়াও ভালোভাবে জানে।’
রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে তার মরদেহ নেই প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ বলছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জানান, চন্দ্রিমায় যে জিয়ার মরদেহ রয়েছে সেই সাক্ষী প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নিজের কাঁধে জিয়ার মরদেহ বহন করেছেন সে সময়ের সেনা অধিনায়ক।
গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘দুদিন আগে এক দলীয় সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জিয়া কোথায় যুদ্ধ করেছেন সেই প্রমাণ নেই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর নেই বলেও মন্তব্য করেন।
ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ রয়েছে জোর দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করা হয়েছিল। এটা তো চাঁদের আলোর মতো পরিষ্কার। এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু হতে পারে না। কারণ তৎকালীন সেনা অধিনায়ক জেনারেল এরশাদ নিজেই জিয়াউর রহমানের লাশ বহন করেছেন।’
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মরদেহ নেই প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি জাফরুল্লাহ চৌধুরীও।
রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জাদুকর শেখ হাসিনা। কী অপূর্ব পরিকল্পনায় তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের রাতে সবকিছু উল্টে দিলেন। ঠিক একইভাবে এখন উনি বলতে শুরু করেছেন চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের শবদেহ নেই।
‘শেখ হাসিনা ইতিহাস ভুলে গেছেন। জিয়াউর রহমানের বডি যারা গ্রহণ করেছে তাদের অনেক এখনও বেঁচে আছেন। সর্বকালে বৃহৎ জনসমাগম হয়েছিল জিয়াউর রহমানের মরদেহ যখন মানিক মিয়া এভিনিউতে আনা হয়েছিল।’
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সেমিনারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার চেষ্টা করছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে এখনও দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের ছক আঁকা হচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতি সহ্য করতে পারে না, তারাই ষড়যন্ত্রের চোরাগলির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে।’
বিএনপি সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘জনগণের সমর্থন না পেয়ে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে বিএনপি, তারা দেশ-বিদেশের নানা স্থানে মিটিং, লবিস্ট নিয়োগ এবং অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।’
বিএনপিকে খুনি-ঘাতকদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হিসেবে অভিহিত করেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘ইতিহাসে কার কী ভূমিকা তা সবার জানা আছে।’