মাগুরা সদরের স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাহিদ মোল্লা। বাড়ি গোপালগ্রাম ইউনিয়নের বাহারবাড় গ্রামে।
ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে সাপ কামড় দেয়। স্থানীয় ওঝার ঝাড়ফুঁকে কাজ না হওয়ায় শুক্রবার সকালে সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক নাহিদকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ কথা শুনে ওঝা তার পরিবার সদস্যদের আশ্বাস দেন, ছেলেকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। সেই বিশ্বাসে ওঝার কাছে নেয়া হয় মৃতদেহ। শুক্রবার দিন-রাত ধরে সেই মরদেহের ঝাড়ফুঁক করেন ওই ওঝা। শনিবার সকালে হাল ছেড়ে নাহিদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন তিনি।
নিউজবাংলাকে এই ঘটনা জানিয়েছেন নাহিদের বাবা স্থানীয় ব্যবসায়ী জামাল মোল্লা ও মামা নেখেরুল ইসলাম। আর নাহিদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাগুরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রফিকুল আহসান।
নেখেরুল জানান, বাবা-মার পাশের রুমে ছোট বোনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমিয়ে ছিল নাহিদ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার চিৎকার শুনে ঘরের লোকজন গিয়ে দেখে, তার পায়ে সাপের কামড়ের চিহ্ন। তখনই স্থানীয় ওঝা করিম মিয়াকে ডেকে আনা হয়।
রাতভর ওঝার চেষ্টার পর নাহিদের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় শুক্রবার সকালে তাকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নেখেরুল বলেন, আদরের ছেলের মৃত্যুর খবর বিশ্বাস করেনি বাবা-মা। তাই তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রওনা হন তারা। পথে মোবাইল ফোনে খবরটি ওঝা করিম মিয়াকে জানানো হয়। ওঝা তখন আশ্বাস দেন, নাহিদকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব; তাকে দ্রুত বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন।
স্থানীয় যুবক শেখ এনামুল বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে ছেলেটিকে সাপে কামড় দিয়েছে। সারারাত এই ওঝা বিষ নামানোর কথা বলে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ঝাড়ফুঁক করছে। কত করে বললাম, সদর হাসপাতালে নেন। কিন্তু পরিবারের সেই পুরান চিন্তাভাবনা। সেই ছেলেকে হাসপাতালের ডাক্তার বলেছে মারা গেছে, অথচ ওঝা নাকি বলেছে বেঁচে আছে। বলেন এটা পাগলেও বোঝে যে, ওঝা পয়সা খাওয়ার লোভে এসব করছে।’
নাহিদের মামা নেখেরুল বলেন, ‘সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছিলেন হাসপাতালে আনতে দেরি হওয়ায় নাহিদের মৃত্যু হয়েছে। তার পরও মনের শান্তির জন্য ওঝা ডেকে চেষ্টা করা হয় তাকে বাঁচাতে। এখন তো দেখছি ওঝা ঠিক বলে নাই। নাহিদ মারাই গেছে। তাকে আমরা আজ সকাল ১০টায় স্থানীয়ভাবে দাফন করেছি।’
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রফিকুল আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নাহিদকে সাপে কামড়িয়েছে এটা নিশ্চিত। তবে কী সাপে কামড়িয়েছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। দেরি করে হাসপাতালে আনার ফলে বিষক্রিয়া সারা শরীরে ছড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে।
‘মানুষ বোঝেই না সাপে কাটলে ওঝার কিছু করার নেই। তবু আগে হাসপাতালে না এনে ওঝাকে দিয়ে সময় শেষ করে ফেলে। এরপর বেশির ভাগ রোগীর মৃত্যু হয়।’